প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য :
শিশুর দৈহিক, মানসিক, সামাজিক, আধ্যাত্মিক, নৈতিক, মানবিক ও নান্দনিক বিকাশ সাধন করা এবং তাদের দেশাত্মবোধ, বিজ্ঞানমনস্কতা, সৃজনশীলতা ও উন্নত জীবনের স্বপ্নদর্শনে উদ্বুদ্ধ করা।
প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্যাবলি :
১. আল্লাহতা’য়ালা/সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস ও নিজ নিজ ধর্মের ভিত্তিতে শিশুর মনে নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করা।
২. শেখার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টির মাধ্যমে শিশুর কল্পনা-শক্তি, সৃজনশীলতা ও নান্দনিকবোধের উন্মেষে সহায়তা করা।
৩. বিজ্ঞানের নীতি-পদ্ধতি ও প্রযুক্তির জ্ঞান অর্জন, সমস্যা সমাধানে তার ব্যবহার এবং বিজ্ঞানমনস্ক ও অনুসন্ধিৎসু করে গড়ে তুলতে সহায়তা করা।
৪. ভাষা ও যোগাযোগ দক্ষতার মাধ্যমে শিশুর চিন্তাশক্তির বিকাশ এবং নিজেকে প্রকাশ করতে সহায়তা করা।
৫. গাণিতিক ধারণা, যৌক্তিক চিন্তা ও সমস্যা সমাধানের যোগ্যতা অর্জনে সহায়তা করা।
৬. সামাজিক ও সুনাগরিক হওয়ার গুণাবলি এবং বিশ্বজনীন দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনে সহায়তা করা।
৭. ভালো-মন্দের পার্থক্য অনুধাবনের মাধ্যমে সঠিক পথে চলতে উদ্বুদ্ধ করা।
৮. অন্যকে অগ্রাধিকার দেওয়ার মাধ্যমে ত্যাগের মনোভাব ও মিলেমিশে বাস করার মানসিকতা সৃষ্টি করা।
৯. প্রতিকূলতা মোকাবেলার মাধ্যমে শিশুর আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করা।
১০. নিজের কাজ নিজে করার মাধ্যমে শ্রমের মর্যাদা উপলব্ধি ও আত্মমর্যাদা বিকাশে সহায়তা করা।
১১. প্রকৃতি, পরিবেশ ও বিশ্বজগৎ সম্পর্কে জানতে ও ভালোবাসতে সহায়তা করা এবং পরিবেশ সংরক্ষণে উদ্বুদ্ধ করা।
১২. নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনে সচেষ্ট করা।
১৩. জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে ভালোবাসতে উদ্বুদ্ধ করা।
প্রাথমিক শিক্ষার প্রান্তিক যোগ্যতাসমূহ :
১. সর্বশক্তিমান আল্লাহতা’য়ালা/সৃষ্টিকর্তার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন, সকল সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসায় উদ্দীপ্ত হওয়া।
২. নিজ নিজ ধর্ম প্রবর্তকের আদর্শ এবং ধর্মীয় অনুশাসন অনুশীলনের মাধ্যমে নৈতিক ও চারিত্রিক গুণাবলি অর্জন করা।
৩. কল্পনা, কৌতুহল, সৃজনশীলতা ও বুদ্ধির বিকাশে আগ্রহী হওয়া।
৪. সংগীত, চারু ও কারুকলা ইত্যাদির মাধ্যমে সৃজনশীলতা, সৌন্দর্যচেতনা, নান্দনিকবোধের প্রকাশ এবং সৃজনশীলতার আনন্দ ও সৌন্দর্য উপভোগে সামর্থ্য অর্জন করা।
৫. প্রকৃতির নিয়মগুলো জানার মাধ্যমে বিজ্ঞানের জ্ঞান অর্জন করা।
৬. প্রযুক্তির উন্নয়ন ও প্রয়োগে জীবনযাত্রার উন্নতি সাধন।
৭. বিজ্ঞানের নীতি ও পদ্ধতি অবলম্বনে সমস্যা সমাধানের অভ্যাস গঠন এবং বিজ্ঞানমনস্কতা অর্জন করা।
৮. বাংলা ভাষার মৌলিক দক্ষতা অর্জন এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে তা কার্যকরভাবে ব্যবহার করা।
৯. বিদেশি ভাষা হিসেবে ইংরেজি ভাষায় প্রাথমিক দক্ষতা অর্জন করা।
১০. তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা লাভ এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ।
১১. গাণিতিক ধারণা ও দক্ষতা অর্জন করা।
১২. যৌক্তিক চিন্তার মাধ্যমে গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে পারা।
১৩. অধ্যবসায় ও একাগ্রতা, ন্যায় ও বিচারবোধ, দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ, শৃঙ্খলা, শিষ্টাচার নৈতিক, আত্মিক ও সামাজিক গুণাবলি অর্জন করা।
১৪. মানবাধিকার, আন্তর্জাতিকতাবোধ, বিশ্বভ্রাতৃত্ব ও বিশ্বসংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী হওয়া।
১৫. স্বাধীন ও মুক্তচিন্তায় উৎসাহিত হওয়া এবং পরমতসহিষ্ণুতা ও গণতান্ত্রিক রীতিনীতি অনুশীলনে আগ্রহী হওয়া।
১৬. ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও সংরক্ষণে যতœশীল হওয়া।
১৭. মানুষের মৌলিক চাহিদা ও পরিবেশের ওপর জনসংখ্যার প্রভাব এবং জনসম্পদের গুরুত্ব¡ সম্পর্কে জানা।
১৮. নৈতিক ও সামাজিক গুণাবলি অর্জনের মাধ্যমে ভালো-মন্দের পার্থক্য নিরূপণ এবং তা বাস্তবজীবনে প্রয়োগ করা।
১৯. অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি, জাতি-ধর্ম-বর্ণ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের সঙ্গে স¤প্রীতি ও শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থানের মানসিকতা অর্জন করা।
২০. পরিবার, বিদ্যালয় ও সামাজিক কর্মকান্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজের ও অন্যের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়া।
২১. প্রতিকূলতা ও দুর্যোগ সম্পর্কে জানা এবং তা মোকাবেলায় আত্মপ্রত্যয়ী হওয়া।
২২. নিজের কাজ নিজে করা এবং শ্রম ও শ্রমজীবীর মর্যাদা সম্পর্কে সচেতন হওয়া।
২৩. প্রকৃতি, পরিবেশ ও বিশ্বজগৎ সম্পর্কে জানা ও ভালবাসা এবং পরিবেশের উন্নয়ন ও সংরক্ষণে উদ্বুদ্ধ হওয়া।
২৪. আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তনের সমস্যা মোকাবেলায় ইতিবাচক ভূমিকা গ্রহণ।
২৫. শরীরচর্চা ও খেলাধুলার মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক বিকাশ সাধন এবং নেতৃত্বের গুণাবলি অর্জন করা।
২৬. নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনে অভ্যাস গঠন করা।
২৭. মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধে উদ্দীপ্ত হওয়া এবং ত্যাগের মনোভাব গঠন ও দেশ গড়ার কাজে সক্রিয় অংশগ্রহণ করা।
২৮. জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা এবং এগুলোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া।
২৯. বাংলাদেশকে জানা ও ভালবাসা।
বিষয়ভিত্তিক প্রান্তিক যোগ্যতা
শিক্ষার্থীদের বয়স, মেধা ও চাহিদাকে বিবেচনায় রেখে অর্জন-উপযোগী যোগ্যতা চিহ্নিত করে প্রাথমিক স্তরের যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাμম প্রণীত হয়। এ শিক্ষাμমের উল্লেখযোগ্য দিক হলো বিভিনড়ব বিষয়ের মাধ্যমে, শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা শেষে ২৯টি প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জনের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হবে। এ ক্ষেত্রে বিষয় সংশ্লিষ্ট প্রান্তিক যোগ্যতার সংখ্যা একরকম নয়। আবার শিক্ষার্থীরা একবারে বা একসঙ্গে প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জন করবে না। ধাপে ধাপে বিভিনড়ব শ্রেণিতে প্রান্তিক যোগ্যতার অংশ বিশেষ অর্জনের মাধ্যমে একটি প্রান্তিক যোগ্যতা পুরোপুরি অর্জনে সক্ষম হবে। প্রান্তিক যোগ্যতাকে বিভিনড়ব শ্রেণিতে বিভাজিত করে শ্রেণিভিত্তিক অর্জন-উপযোগী যোগ্যতা তথা শিখনμম প্রণীত হয়েছে যা শিক্ষার্থীরা পর্যায়μমে অর্জনে সক্ষম হবে।
প্রাথমিক স্তরের জন্য নির্ধারিত ১২টি বিষয়ের মাধ্যমে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা শেষে শিক্ষার্থীরা ২৯টি প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জন করবে। এ ২৯টি প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জনের লক্ষ্যে প্রত্যেক বিষয়ের জন্য পৃথক প্রান্তিক যোগ্যতাসমূহ নির্ধারণ করা হয়েছে। ১ম থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত বিষয় ও বিষয়ভিত্তিক প্রান্তিক যোগ্যতার সংখ্যা নিম্নরুপঃ
কোনো কোনো প্রান্তিকয্যেগ্যতা অর্জন ১ম শ্রেণি বা অন্য যে কোনো শ্রেণি থেকে শুরু করে ৫ম বা অন্য যে কোনো শ্রেণিতে সমাপ্ত হতে পারে । উল্লেখ্য, পূর্বে উল্লিখিত বিষয় ও প্রান্তিকযোগ্যতার তালিকায় দেখা যায় যে, বিভিনড়ব বিষয়ের প্রান্তিকযোগ্যতার সংখ্যাও একরকম নয়।
প্রাথমিক স্তরের জন্য নির্ধারিত ১২টি বিষয়ের মাধ্যমে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা শেষে শিক্ষার্থীরা ২৯টি প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জন করবে। এ ২৯টি প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জনের লক্ষ্যে প্রত্যেক বিষয়ের জন্য পৃথক প্রান্তিক যোগ্যতাসমূহ নির্ধারণ করা হয়েছে। ১ম থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত বিষয় ও বিষয়ভিত্তিক প্রান্তিক যোগ্যতার সংখ্যা নিম্নরুপঃ
বিষয়ভিত্তিক প্রান্তিক যোগ্যতা |
শ্রেণিভিত্তিক অর্জন-উপযোগী যোগ্যতা
কোন একটি প্রান্তিক যোগ্যতা একবারে বা একসঙ্গে কোন একটি শ্রেণিতে অর্জন করা যায় না। ধাপে ধাপে বিভিনড়ব শ্রেণিতে প্রান্তিক যোগ্যতার অংশ বিশেষ অর্জনের মাধ্যমে পুরো প্রান্তিক যোগ্যতাকে অর্জন করতে হয়। বিষয়ভিত্তিক প্রান্তিক যোগ্যতার শ্রেণিভিত্তিক বিভাজিত রূপকে শ্রেণিভিত্তিক অর্জন-উপযোগী যোগ্যতা বলে। এই শ্রেণিভিত্তিক অর্জন-উপযোগী যোগ্যতাগুলোকে বিভাজন করে শিখনফল নির্ধারণ করা করা হয়েছে। সবশেষে যোগ্যতা ও শিখনফলকে ভিত্তি করে বিভিনড়ব শ্রেণির ও বিষয়ের বিষয়ব¯‧ তথা পাঠ্যপুস্তক রচনা করা হয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে নিচে বাংলা বিষয়ে শোনার দক্ষতা কীভাবে শ্রেণিভিত্তিক অর্জন উপযোগী যোগ্যতায় বিভাজন করা হয়েছে তা দেখানো হলো:
শ্রেণিভিত্তিক অর্জন-উপযোগী যোগ্যতা |
প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য, প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্যাবলি, প্রাথমিক শিক্ষার প্রান্তিক যোগ্যতাসমূহ।
Tags:
প্রাথমিক শিক্ষা