মূল্যায়ন :
শিখন শেখানো কার্যাবলির অন্যতম অংশ হলো মূল্যায়ন। মূল্যায়নের মূল লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের শিখনের সহায়তা করা। শিখন শেখানো কার্যক্রমকে অধিকতর ফলপ্রসূ করার জন্য মূল্যায়ন প্রয়োজন। আমরা শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর সাথে যে কার্যক্রমগুলো করে থাকি বা শিখন শেখানো কার্যক্রমে যে কাজগুলো করি তার একটি মূল উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীরা শ্রেণিতে কতটুকু শিখনফল বা যোগ্যতা অর্জন করেছে বা কতজন শিক্ষার্থী আজকের পাঠ বুঝতে পেরেছে তা যাচাই করার জন্য আমরা মূল্যায়ন করে থাকি। এককথায় বলা যায় শিক্ষার্থীর পারগতা যাচাই এর নাম হলো মূল্যায়ন। এক্সপ্রেসিভ আর্ট বিষয়টির শারীরিক শিক্ষা অংশের জন্য ও মূল্যায়নের প্রয়োজন আছে। এ বিষয়টি যেহেতু শিক্ষার্থীদের হাতে কলমে শিখানো হয় তাই মূল্যায়নের জন্য অনেক গুলো কৌশল আমরা ব্যবহার করতে পারি।
মূল্যায়নের গুরুত্ব :
- মূল্যায়নের মাধ্যমে শিখনফল কতটুকু অর্জিত হয়েছে তা নিরুপণ করা যায়।
- শিশুর অর্জিত সামাজিক দক্ষতাসমূহ যাচাই করা যায়।
- শিক্ষক নিজেকে মূল্যায়ন করতে পারে।
- মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষক প্রয়োজনীয় শিখন- শেখানো কার্যাবলি গ্রহণের নির্দেশনা লাভ করেন।
- পিছিয়ে পরা শিক্ষার্থীদেও সনাক্ত করা যায়।
মূল্যায়নের শ্রেণিবিভাগ:
শিক্ষাক্ষেত্রে র্কোস চলাকালীন সময় বা র্কোস সমাপ্তির পর সাধারণত মূল্যায়ন করা হয়। এ মূল্যায়ন কে দু ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
- গাঠনিক/ধারাবাহিক মূল্যায়ন। ( formative assessment)
- চূড়ান্ত/সামষ্টিক মূল্যায়ন। (summative assessment)|
এই মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীর শিখন বা পারদর্শিতার সবল দিক চিহ্নিত করা হয়; একই সাথে শিখনের দুর্বলতা বা সমস্যা চিহ্নিত করা হয়। যখন মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর শিখনের সমস্যা শনাক্ত করা হয়, তখন তাকে বলা হয় সমস্যা শনাক্তকারী মূল্যায়ন (diagnostic assessment)|। শিক্ষার্থীর শিখন সমস্যা শনাক্ত করার পর তা সমাধানের জন্য শিক্ষক যে পদক্ষেপ নেন (যেমনÑ শিক্ষণ পদ্ধতি বা কৌশলের উনড়বয়ন) এবং শিক্ষার্থীকে এগিয়ে যাওয়ার দিকনির্দেশনা দেন, তখন তা হয় গাঠনিক মূল্যায়ন। একে অনানুষ্ঠানিক মূল্যায়নও বলা হয়
গাঠনিক মূল্যায়নের বৈশিষ্ট্য :
- গাঠনিক মূল্যায়ন একটি চলমান ও অবিরত প্রক্রিয়া।
- এ ধরনের মূল্যায়নে কোন ধরা বাধা নিয়মের প্রয়োজন হয় না।
- শিখন শেখানো প্রক্রিয়া পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে অগ্রসর হচ্ছে কিনা তা নির্ণয়ের জন্য এ ধরনের মূল্যায়ন করা হয়।
- এ মূল্যায়নের প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক দু ধরনের হতে পারে।
- গাঠনিক মূল্যায়নের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীকে গ্রেড প্রদান করা যেতে পারে আবার নাও যেতে পারে।
- কুইজ, বিষয়ভিত্তিক মৌখিক ও লিখিত প্রশড়ব, দলীয় কাজ ও উপস্থাপন, জোড়া কাজ বা ব্যক্তিগত পঠন, ইত্যাদি।
- বাড়ির কাজ বা অ্যাসাইনমেন্ট : এ ধরনের কাজ দিয়ে শিক্ষার্থী বিষয়বস্তু কতটা বুঝতে পেরেছে তার ধরন ও বিস্তৃতি মূল্যায়ন করা যায়।
- শ্রেণিকক্ষে বিভিন্ন ধরনের কাজ যেমনÑ আলোচনা, দলগত ভাবে কাজ, স্বতন্ত্রভারে কাজ ইত্যাদি : শ্রেণিকক্ষে আলোচনার সুযোগ দিয়ে স্বতন্ত্র বা দলগতভাবে কাজ করতে দিয়ে মূল্যায়ন করা যায়।
- শ্রেণিকক্ষে মৌখিক প্রশ্নোত্তর : শ্রেণিকক্ষে মৌখিকভাবে প্রশ্ন করে জানা যায় শিক্ষার্থীরা পাঠের বিষয়বস্তু সর্ম্পকে কতটুকু ধারণা পেল।
- চেকলিস্ট : চেকলিস্ট এর সাহায্যে ও শিক্ষার্থীদের বোঝার ধরন, পরিমাপ ও বিস্তৃতি মূল্যায়ন করা যায়।
- রেটিং স্কেল : শিক্ষার্থীদের পাঠের বিষয়বস্তু সর্ম্পকে ধারণা কতটুকু হলো বা তারা কতটুকু বুঝতে পারেনি তা জানার জন্য রেটিংস্কেল ব্যবহার করা যায়।
- প্রশ্ন উত্তর ছাড়াও মিলকরণ, শূন্যস্থান পূরণ, চিহ্নিতকরণ ইত্যাদি ব্যবহার করেও শিক্ষার্থীর অবস্থান জানা যেতে পারে।
সাধারণত আনুষ্ঠানিক এবং বিশেষ পরিবেশে (যেমনÑ পরীক্ষার হল) এ ধরনের মূল্যায়ন সংঘটিত হয়। তাই একে আনুষ্ঠানিক মূল্যায়নও (formal assessment) বলা হয়।
যেমন: বাংলাদেশের বিদ্যালয়ে ১ম, ২য় সাময়িক (তিন/চার মাস পর পর) এবং বছরের শেষে যে মূল্যায়ন অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণভাবে কোনো কোর্স, ইউনিট, অধ্যায়, সেমিস্টার বা টার্মের শেষে এই মূল্যায়ন অনুষ্ঠিত হয়
চূড়ান্ত/সামষ্টিক মূল্যায়ন। মূল্যায়নের বৈশিষ্ট্য :
- এই মূল্যায়ন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীকে সাধারণত গ্রেড বা নম্বর প্রদান করা হয়
- শিক্ষার্থীকে উত্তীর্ণ বা অনুত্তীর্ণ; কিংবা পাস-ফেল হিসেবে ফলাবর্তন দেয়া হয়।
- শিক্ষার্থীর শিখন সমস্যা সমাধান বা উনড়বয়নের সুযোগ থাকে না।
সামষ্টিক মূল্যায়নের কার্যাবলি ও সময়:
সাধারণত বিভিন্ন অভীক্ষা ও পরীক্ষার মাধ্যমে সামষ্টিক মূল্যায়ন অনুষ্ঠিত হয়। মূল্যায়নের ফল স্কোর বা গ্রেডের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। যেমন: A, B, C ইত্যাদি। অর্থাৎ মূল্যায়নের ফল শিক্ষার্থীকে সাংখ্যিকভাবে শ্রেণিবিভক্ত (যেমন: র্যাংক বা সিরিয়াল করা; রোল নং প্রদান অথবা গ্রেড প্রদান) করা এবং শিক্ষার্থীদের পরস্পরের সাথে তুলনা করার কাজে ব্যবহার করা হয় (Black et al., 2003)।
মূল্যায়নে গাঠনিক এবং সামষ্টিক মূল্যায়নের ভূমিকা
এ দুই ধরনের মূল্যায়ন কৌশলের মধ্যে কোনো একটি অপরটির চেয়ে অধিক কার্যকর নয়। শিক্ষার্থীদের শিখন সম্পর্কে যথাযথ তথ্য সংগ্রহ করার জন্য দুটি পদ্ধতিরই প্রয়োজন রয়েছে পদ্ধতি দুটিকে পরস্পরের পরিপূরক হিসেবে বিবেচনা করা প্রয়োজন। যেকোনো একটি ওপর অত্যধিক নির্ভরতা বাস্তব শ্রেণিকক্ষে অনুষ্ঠিত শিখন-শেখানো প্রক্রিয়া সম্পর্কে অস্পষ্ট ধারণার জন্ম দেবে।
প্রাক-প্রাথমিক মূল্যায়ন কেমন হবে তা জানতে এখানে ক্লিক করুন।
প্রাথমিক শিক্ষা অথবা ডিপিএড সম্পর্কে যে কোন বিষয় জানতে নিচে কমেন্ট করুন। অথবা এই সাইটের পেজে লাইক দিয়ে রাখুন।
Tags:
প্রাথমিক শিক্ষা