নবম (৯ম) শ্রেণির ২০২১ সালের ১ম সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট প্রশ্ন প্রকাশ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। নবম শ্রেণীর অ্যাসাইনমেন্ট বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় উত্তরপত্র সহ সকল শ্র্রেণির সকল বিষয়ের এসাইনমেন্টের জন্য চোখ রাখুন এই সাইটে।
আরো পড়ুনঃ
৯ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর
শ্রেণিঃ নবম
বিষয়ঃ বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়।
বিভাগঃ বিজ্ঞান
এ্যাসাইনমেন্ট বা নির্ধারিত কাজের ক্রমঃ এ্যাসাইনমেন্ট বা নির্ধারিত কাজ-১;
অধ্যায় ও অধ্যায়ের শিরােনামঃ প্রথম অধ্যায়ঃ পূর্ব বাংলার আন্দোলন ও জাতীয়তাবাদের উন্থান (১৯৪৭-১৯৭০)
পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত পাঠ নম্বর ও বিষয়বস্তুঃ
- ১.১ বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশে ভাষা আন্দোলন-৪
- ১.২ বাঙালি জাতীয়তাবাদে রাজনৈতিক আন্দোলনের ভূমিকা-৫
- ১.৩ সামরিক শাসন ও পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ (১৯৫৮-৭০)-৯
এ্যাসাইনমেন্ট বা নির্ধারিত কাজঃ
১৯৫২, ১৯৬৬, ১৯৭০ সাল বাংলাদেশের ইতিহাস বিনির্মানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু সময়। এর মাঝে কোন সালের ঘটনাপ্রবাহ বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে অধিকতর প্রেরণা যুগিয়েছিল বলে তুমি মনে কর? যুক্তিসহ তােমার মতামত তুলে ধর।
নির্দেশনাঃ
১. উল্লিখিত সালগুলির সাথে সম্পর্কিত ঘটনাগুলি ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করবে।
২. যে ঘটনাটি মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে তা ব্যাখ্যা করবে।
৩. উত্তরের স্বপক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করবে।
৪. নিজস্ব মতামত প্রদান করবে।
মূল্যায়ন রুব্রিক্সঃ
ক. অতি উত্তম:
- ১. পরিপূর্ণমাত্রায় বিষয়বস্তু সঠিক ও ধারাবাহিক;
- ২. তথ্য, তত্ত্ব, ধারণা, সূত্র ইত্যাদি পাঠ্যপুস্তকের সাথে সম্পূর্ণ সঙ্গতিপূর্ণ;
- ৩. লেখায় লক্ষণীয় মাত্রায় নিজস্বতা ও সৃজনশীলতা;
খ. উত্তমঃ
- ১. অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিষয়বস্তু সঠিক ও ধারাবাহিক;
- ২. তথ্য, তত্ত্ব, ধারণা, সূত্র ইত্যাদি পাঠ্যপুস্তকের সাথে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সঙ্গতিপূর্ণ;
- ৩. লেখায় আংশিক নিজস্বতা ও সৃজনশীলতা বিদ্যমান;
গ. ভালােঃ
- ১. বিষয়বস্তুর সঠিকতা থাকলেও ধারাবাহিকতার অভাব;
- ২. লেখায় তথ্য, তত্ত্ব, ধারণা, সূত্র ইত্যাদি আংশিকভাবে সঙ্গতিপূর্ণ;
- ৩. লেখায় সামান্য মাত্রায় নিজস্বতা ও সৃজনশীলতা বিদ্যমান;
ঘ. অগ্রগতি প্রয়ােজনঃ
- ১. বিষয়বস্তুর সঠিকতা ও ধারাবাহিকতার অভাব;
- ২. লেখায় তথ্য, তত্ত্ব, ধারণা, সূত্র ইত্যাদি সঙ্গতির;
- ৩. লেখায় নিজস্বতা ও সৃজনশীলতা অনুপস্থিত;
নবম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান ২০২১
১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের অবসান হয়। জন্ম নেয় ভারত এবং পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র। পাকিস্তানের ছিল দুটি অংশ ।পৃববাংলা পাকিস্তানের একটি প্রদেশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এ অংশের নাম পূর্ব পাকিস্তান । অপর অংশটি পশ্চিম পাকিস্তান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
পূর্ব বাংলার ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাজনীতি ও সমাজব্যবস্থা পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী নিজেদের করায়ত্ত করতে শুরু করে এবং বৈষম্য সৃষ্টি করে।এর বিরুদ্ধে পূর্ববাংলার জনগণ প্রতিবাদ ও আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুলে। এতিহাসিক ছয় দফার ভিভিতে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামীলীগকে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করে অর্থনৈতিক শোষণহীন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ রাষ্ট্র
প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করে। বাংলা ভাষা, ইতিহাস এ্রতিহ্য, সংস্কৃতি ও বাঙালি জাতিগত পরিচয়ে জাতীয় এঁক্য গঠিত হয়। এই জাতীয় এঁক্যই বাঙালি জাতীয়তাবাদ । .
১৯৫২ সাল (ভাষা আন্দোলন)
বাঙ্গালির ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস এক রক্তরঞ্জিত ইতিহাস। ১৯৪৭ সালে কেবলমাত্র ধর্মীয় চেতনাকে পুঁজি করে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটির সৃষ্টি হয়। পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী চেয়েছিল বাঙালি জাতির ভাষা ও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে দিতে। শুধু সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও তারা বিমাতা সুলভ আচরণ করছিল। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান সৃষ্টির মাত্র ১৭ দিন পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ অধ্যাপক আবুল কাশেম-এর নেতৃত্বে ১ সেপ্টেম্বর ৩ সদস্য বিশিষ্ট তমদ্দুন মজলিস গঠিত হয়। এ সংগঠনের অন্য নেতৃদ্বয় ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও শামসুল আলম। সূচনালগ্ন থেকেই এ সংগঠনটি বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবি উত্থাপন করেছিল। ১৯৪৮ সালে ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত পাকিস্তান গণপরিষদে বাংলা ভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি উত্থাপন করেছিলেন। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্ধান্তনিয়েছিল। এ সিদ্ধান্ত জোর করে বাঙালিদের উপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। অথচ উর্দু ভাষাভাষী লোকের সংখ্যা ছিল সমগ্র পাকিস্তানে অনূর্ধ্ব শতকরা ৬.০০ ভাগ। পক্ষান্তরে, বাংলা ভাষাভাষী লোকের সংখ্যা ছিল শতকরা ৫৪.৬ জন।
১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ গঠিত পূর্ব বাংলা মুসলিম ছাত্রলীগ এর ইশতিহারে রাষ্ট্র ভাষার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ জানান হয়। কিন্তু ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকা সফরে এসে ঢাকার রমনা রেসকোর্সের এক জনসভায় ঘোষণা করেন, "Urdu and only Urdu shall be the state language of Pakistan" অর্থাৎ উর্দু এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। এ ঘোষণার মাত্র তিন দিন পর তিনি আবার ঐ ঘোষণার পুনরাবৃত্তি করেন। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ভাষা আন্দোলনের দাবিতে দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। ধীরে ধীরে আন্দোলন পরিপক্কতার আকার ধারণ করে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রæয়ারি “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই” ¯েøাগানে ঢাকার রাজপথ মুখরিত হয়। শান্তিপূর্ণ মিছিলের উপর তাবেদার পুলিশ বাহিনী গুলি চালায়। ফলে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় বরকত, সালাম, জব্বার ও রফিক এবং নাম না জানা আরও অনেকে। ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে সারা দেশে প্রচন্ড বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। অবশেষে ১৯৫৬ সালের পাকিস্তানের প্রথম সংবিধানে বাংলাকে উর্দুর পাশাপাশি রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
১৯৬৬ সাল (ছয় দফা আন্দোলন)
পাকিস্তান’ রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়েছিল লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে। লাহোর প্রস্তাবে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের কথা বলা হলেও পাকিস্তানে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই পূর্ব বাংলার জনগণের উপর শুরু হয় পশ্চিমা শাসক গোষ্ঠীর শোষণ, বঞ্চনা ও নির্যাতন। ফলে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক বৈষম্য পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে প্রকট আকার ধারণ করে। পশ্চিমা শাসক গোষ্ঠীর অপশাসনের বিরুদ্ধে পূর্ব বাংলার আন্দোলন তীব আকার ধারণ করে। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যদ্ধু শুরু হলে পূর্ব পাকিস্তান সম্পূর্ণ অরক্ষিত হয়ে পড়ে। সামরিক দিক থেকে পূর্ব পাকিস্তানের অসহায় অবস্থা এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য থেকে মুক্তির লক্ষে শুরু হয় স্বাধিকারের আন্দোলন। শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এ আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ১৯৬৬ সালের ৫-৬ ফেব্র“য়ারি লাহোরে বিরোধী দলের এক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। উক্ত সম্মেলনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ‘ছয় দফা’ কর্মসূচি পেশ করেন। ছয় দফা কর্মসূচিকে তিনি ‘পূর্ব বাংলার বাঁচার দাবি’ বলে অভিহিত করেন। বাংলাদেশের জন্য ছয় দফা আন্দোলন এতোই গুরুত্বপূর্ণ যে একে ম্যাগনা কার্টা বা বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ নামে অভিহিত করা হয়।
১৯৭০ সাল (সাধারণ নির্বাচন)
১৯৭০ সালের নির্বাচন ও একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলন বাঙালির জাতিসত্তার প্রেক্ষাপটে জাগরণের শক্তি হিসেবে উদ্ভাসিত হয়ে আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই দুই আন্দোলনে মানবিক চেতনায়
উদ্দুবদ্ধ হয়ে বাঙালির আত্মজাগরণের জায়গা নির্ধারণ করেছিলেন । এই দুটো জায়গায় নিজের ভূমিকাকে আত্মপ্রত্যয়ী চেতনায় উদ্বদ্ধ করে বাঙালির মানসপটে বিপুলভাবে আত্মজাগরণের দরজা ধা দেন। বাঙালি এুঁক্যবদ্ধ হয়ে দৃঢ়তার সঙ্গে নিজেদের অবস্থান নির্ধারণ করে। সত্তরের নির্বাচন ও অসহযোগ আন্দোলনে শেখ মুজিবুর রহমান বিপুল সাহসী চৈতন্য ঐক্যবদ্ধ বাঙালির তোরণ উন্মোচন করেন।
রাজনোতিক দল রাজনাতির মাঠের আসর সরগরম করে তোলে । কিন্তু যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে না । সেপ্টেম্বর মাসে প্রবল বন্যা হওয়ায় নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার দাবি ওঠে । ইয়াহিয়া
খান নির্বাচন পিছিয়ে দেন । জাতীয় পরিষদের ৭ ডিসেম্বর এবং প্রাদেশিক পরিষদের ১৭ ডিসেম্বর দিন
ধার্য করা হয়। ১৯৭০ সালের ১২-১৩ নভেম্বর পূর্ব বাংলার দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকায় ভয়াবহ জলোচ্ছাস ও ঘূর্ণিঝড় হয় | প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া এই ঘৃর্ণিঝড়ে কোনো সাহায্য করেন নি।
বঙ্গবন্ধু ত্রাণ নিয়ে ত্রাণকাজে নিজেকে যুক্ত করেন। এই ঘটনায় প্রায় ১০ লাখ লোক মৃত্যুবরণ করে । ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এলাকায় । এরপর ৭ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় । বিপুল ভোটের ব্যবধানে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে আওয়ায়ী লীগ বিজয় লাভ করে।সন্তরের সাধারণ নির্বাচন ছিল বাঙালির প্রাণের জোয়ার | এই জোয়ারের প্রবল ঢেউয়ে সাধারণ মানুষকে মাতিয়ে তোলেন বঙ্গবন্ধু শেক মুজিবুর রহমান।
মু্ক্তিযুদ্ধে প্রেরণাকারী ঘটনা।
আমি মনে করি, ১৯৭০ সালের ঘটনাপ্রবাহ বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে অধিকতর প্রেরণা যুগিয়েছিল। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় এবং প্রাদেশিক পরিষদ নিবচিনে আওয়ামী লীগ নিরস্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। ফলে ৬ দফা ১১ দফার প্রতি জনগণের অকুষ্ঠ সমর্থনের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায় । বাঙালি জাতীয়তাবাদের রাজনৈতিক বিজয় ঘটে । অন্যদিকে, পাকিস্তানের সরকার ও
স্বার্থান্বেষী মহলের জন্য এটি ছিল বিরাট পরাজয়। তারা বাঙালির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিরোধিতা ও ষড়যন্ত্র করতে থাকে। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ পশ্চিম পাকিস্তানের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে অবস্থান গ্রহণ করে। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যূদয়ের পিছনে নির্বাচনের অপরিসীম শুরুত্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে । এই নির্বাচনে বাঙালি জাতীয়তাবাদের রাজনৈতিক অগ্রযাত্রাকে মুক্তিযুদ্ধের চরিত্র দানে বিশাল ভুমিকা রাখে । পরিণতিতে স্বাধীন-সাবভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভূদ্যয় ঘটে।