তৃতীয় শ্রেণির বাংলা প্রবন্ধ রচনা Class 3 Bangla Essay

তৃতীয় শ্রেণির বাংলা প্রবন্ধ রচনা Class 3 Bangla Essay
তৃতীয় শ্রেণির বাংলা প্রবন্ধ রচনা


প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর বাংলা বিষয়ে রচনা লিখতে হয়। তাছাড়া বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে রচনা লিখতে হয়।

 {tocify} $title={Table of Contents}

অনেকের কাছে গাইড বই বা অন্যান্য বই থাকার কারণে সেখান থেকে রচনাগুলো অনুশীলন করার সুযোগ পায় শিক্ষার্থীরা। কিন্তু কোন কারণে গাইড বই বা বড় ভাই বোনদের কোন বই না পেলে শিক্ষার্থীরা রচনা অনুশীলন করার সুযোগ পাই না। তাই আজকে আমরা তৃতীয় শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের রচনা সমূহ নিয়ে আলোচনা করব এবং কতগুলো রচনা এখানে দেওয়া হবে।

তৃতীয় শ্রেণির বাংলা প্রবন্ধ রচনা

প্রবন্ধ কী?

কোনো একটি বিষয়কে ভাব ও চিন্তার মধ্য দিয়ে ভাষায় প্রাণবন্ত করে প্রকাশ করাই হচ্ছে প্রবন্ধ।

প্রবন্ধ কত প্রকার?

বিষয়ভেদে প্রবন্ধকে প্রধানত তিন ভাগে বিভক্ত করা যায়। যথাÑ ১. বর্ণনামূলক; ২. ঘটনামূলক ও ৩. চিন্তামূলক।

$ads={1}

প্রবন্ধ রচনার ক্ষেত্রে যা যা প্রয়োজন :

প্রবন্ধ রচনার সময় কিছু নিয়মকানুন অনুসরণ করা প্রয়োজন। তাহলে প্রবন্ধের মান বৃদ্ধি পায় এবং পরীক্ষায় অধিক নম্বর পাওয়া যায়। এক্ষেত্রেÑ

  • প্রবন্ধের বিষয় সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে।
  • চিন্তাপ্রসূত ভাবগুলো অবশ্যই ধারাবাহিকভাবে সাজাতে হবে।
  • প্রত্যেকটি ভাব উপস্থাপন করতে হবে পৃথক অনুচ্ছেদে।
  • একই ভাব, তথ্য বা বক্তব্য বারবার উল্লেখ করা যাবে না।
  • রচনার ভাষা হতে হবে সহজ, সরল ও প্রাঞ্জল।
  • উপস্থাপিত তথ্যাবলি অবশ্যই নির্ভুল হতে হবে।
  • বড় ও জটিল বাক্য যতটা সম্ভব পরিহার করতে হবে।
  • নির্ভুল বানানে লিখতে হবে।
  • সাধু ও চলিত ভাষার মিশ্রণ ঘটানো যাবে না।
  • উপসংহারে সুচিন্তিত নিজস্ব মতামত উপস্থাপন করতে হবে।

 

 আমাদের এই বাংলাদেশ রচনা তৃতীয় শেণি

সূচনা : ‘সকল দেশের রানি সে যে আমার জন্মভ‚মি।’

সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা আমাদের এই বাংলাদেশ। সবুজে ঘেরা, পাখি ডাকা দেশটির রূপের কোনো শেষ নেই। কবির দেশ, বীরের দেশ, গানের দেশ, মায়ের দেশ- এরকম অনেক নামে এ দেশকে ডাকা হয়।

অবস্থান : বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি স্বাধীন দেশ। এর সীমান্তের অধিকাংশ জুড়ে আছে ভারত। আর সামান্য অংশে মিয়ানমার। দক্ষিণে রয়েছে বঙ্গোপসাগর।

স্বাধীনতা লাভ : ১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে।

জনসংখ্যা : জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। বর্তমানে দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি।

$ads={1}

ভাষা : বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। এদেশে অনেক জাতি-গোষ্ঠীর লোক বাস করে। এদের প্রত্যেকেরই রয়েছে নিজস্ব ভাষা। তবে বাংলা-ই আমাদের রাষ্ট্রভাষা।

ভ‚-প্রকৃতি : বাংলাদেশের প্রায় সবটাই সমভ‚মি। সিলেট, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কুমিল্লার কিছু অংশে পাহাড় রয়েছে। এছাড়া রয়েছে শত-সহস্র আঁকাবাঁকা নদ-নদী।

ঋতুবৈচিত্র্য : বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। প্রতি দুই মাসে একটি করে ঋতুর পালাবদল ঘটে। একেক ঋতুতে প্রকৃতি একেক সাজে সেজে ওঠে। প্রতিটি ঋতুর সৌন্দর্যই অতুলনীয়। এদেশের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মূল কারণ এই ঋতুবৈচিত্র্য।

জনজীবনের বৈচিত্র্য : বাংলাদেশে আছে নানা ধর্মের, নানা পেশার লোকজন। বাঙালি ছাড়াও দেশে বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করে। তাদের আছে নিজস্ব জীবনযাপন পদ্ধতি। সব ধরনের মানুষ এদেশে মিলেমিশে থাকে। 

প্রাকৃতিক সম্পদ : বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ একটি দেশ। গ্যাস আমাদের প্রধান সম্পদ। এছাড়াও রয়েছে কয়লা, চুনাপাথর প্রভৃতি।

উপসংহার : বাংলাদেশ আমাদের গর্ব ও অহংকার। দেশকে আমরা মায়ের মতো ভালোবাসি।

 গরুর রচনা তৃতীয় শেণি

সূচনা : বাংলাদেশের কৃষিভিত্তিক সমাজে গরু সন্তানের মতোই লালিত পালিত হয়। শান্ত ও নিরীহ প্রকৃতির এই প্রাণীটি খুব সহজেই পোষ মানে।

দৈহিক গড়ন : গরু আড়াই থেকে তিন হাত উঁচু এবং তিন থেকে পাঁচ হাত লম্বা হয়ে থাকে। এর মাথায় দুটি শিং, দুটি কান, দুটি চোখ, চারটি পা ও একটি লম্বা লেজ আছে। লেজের আগায় এক গোছা চুল থাকে। এই লেজ দিয়ে গরু মশা-মাছি তাড়ায়। এর সারা শরীর ছোট ছোট লোমে ঢাকা। পায়ের খুর দুভাগে বিভক্ত। গরুর মুখের উপরের পাটিতে দাঁত নেই।

বর্ণ : সাদা, কালো, লাল, ধূসর, মিশ্র প্রভৃতি রঙের গরু দেখতে পাওয়া যায়।

$ads={1}

খাদ্য : গরুর প্রধান খাদ্য ঘাস। এছাড়া এরা লতাপাতা, ভুসি, খড়, ভাতের মাড় ইত্যাদিও খায়।

উপকারিতা : আমরা গরুর মাংস খাই। গরু আমাদের দুধ দেয়। দুধ দিয়ে ঘি, মাখন, ক্ষীর, ছানা ইত্যাদি মজাদার খাবার তৈরি হয়। এর চামড়া দিয়ে জুতা, ব্যাগ এবং শিং দিয়ে বোতাম, চিরুনি ইত্যাদি তৈরি হয়। ক্ষেতে লাঙল দেওয়া ও গাড়ি টানার কাজে গরুকে ব্যবহার করা হয়। গরুর গোবর অত্যন্ত উৎকৃষ্ট মানের সার।

উপসংহার : গরু অত্যন্ত উপকারী জন্তু। তাই এর যতœ নেওয়া প্রয়োজন।

  ধান রচনা তৃতীয় শেণি

সূচনা : কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফসল হলো ধান। এটি আমাদের প্রধান খাদ্যশস্য।

চাষের অঞ্চল : আমাদের দেশে গ্রামের মাঠে মাঠে ধান চাষ করা হয়। হাওর, খাল, বিল এবং নদীর চরেও ধানের চাষ হয়।

বৈশিষ্ট্য : ধানগাছ তিন থেকে চার ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। এর পাতা চিকন ও দীর্ঘ। কাঁচা ধানগাছ সবুজ থাকে। ধান পাকলে ধানসহ গাছের রং সোনালি হয়।

উৎপাদন : পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই ধান জন্মায়। তবে এশিয়া মহাদেশ বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, চীন, জাপান, থাইল্যান্ড ধানের জন্যে বিখ্যাত। বাংলাদেশের বরিশাল ও দিনাজপুর জেলায় বেশি ধান উৎপাদিত হয়। আমাদের দেশে সাধারণত চার প্রকারের ধান উৎপন্ন হয়। যথাÑ আউশ, আমন, বোরো ও ইরি।

$ads={1}

চাষের সময় : আউশ ধান চৈত্র-বৈশাখ মাসে বুনতে হয় এবং আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে কাটা হয়। আমন ধান আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে বুনতে হয় এবং কার্তিকÑঅগ্রহায়ণ মাসে কাটা হয়। অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাসে বোরো ধানের চারা রোপণ করা হয় এবং চৈত্রÑবৈশাখ মাসে কাটা হয়। ইরি ধানের চাষ বছরের বিভিন্ন সময়ে করা হয়।

ধানজাত দ্রব্য : ধান থেকে চাল হয়। চাল দিয়ে ভাত রান্না করা হয়। এছাড়া চাল থেকে চিঁড়া, মুড়ি, খই ইত্যাদি খাবার তৈরি হয়। ধানের খড় গরু-মহিষের খাদ্য।

উপসংহার : আমাদের দেশের খাদ্যের চাহিদা মেটাতে ধানের উৎপাদন বাড়ানো প্রয়োজন। চাষাবাদের ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।

 আমাদের গ্রাম রচনা তৃতীয় শেণি

সূচনা : ‘আমাদের ছোট গ্রাম মায়ের সমান

আলো দিয়ে বায়ু দিয়ে বাঁচাইছে প্রাণ।’

আমাদের গ্রামের নাম ঘোপাল। গ্রামটি ফেনী জেলায় অবস্থিত। গ্রামের একপাশ দিয়ে বয়ে গেছে ফেনী নদী।  

সৌন্দর্য : আমাদের গ্রামটি ছবির মতো সুন্দর। আম, কাঁঠাল, বটসহ নানা রকম গাছ-গাছালিতে গ্রামটি ঘেরা। চারদিকে সবুজ আর সবুজ। বিভিন্ন মৌসুমে ফোটে নানা রকম ফুল। গ্রামের মেঠো পথ, সোনালি ধানক্ষেত, ছায়া ঢাকা বাঁশঝাড় দেখলে মন জুড়িয়ে যায়।

গ্রামের মানুষ : আমাদের গ্রামে প্রায় দেড় হাজার লোকের বাস। এখানে আছে নানা পেশার, নানা ধর্মের মানুষ। গ্রামের মানুষ মিলেমিশে বসবাস করে। কেউ ঝগড়াÑবিবাদ করে না।

$ads={1}

গ্রামের স্থাপনা : আমাদের গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি উচ্চ বিদ্যালয়, একটি লাইব্রেরি, একটি খেলার মাঠ, একটি বাজার, দুটি মসজিদ, একটি মন্দির ও একটি ডাকঘর আছে।

গ্রামের আর্থিক অবস্থা : আমাদের গ্রামের মানুষের আর্থিক অবস্থা মোটামুটি ভালো। গ্রামের মাঠে মাঠে ফলে প্রচুর ধান, পাট, গম, মসুর, সরিষা, আখ ইত্যাদি। বড় বড় পুকুরগুলোতে নানা রকম মাছের চাষ হয়।

উপসংহার : আমাদের গ্রামকে আমরা সবাই মায়ের মতো ভালোবাসি। গ্রামের উন্নয়নে সবাই মিলেমিশে কাজ করার চেষ্টা করি। 

আমাদের বিদ্যালয় রচনা তৃতীয় শেণি

সূচনা : “বিদ্যালয়, মোদের বিদ্যালয়,

এখানে সভ্যতারই ফুল ফোটানো হয়।”

বিদ্যালয় হচ্ছে ভালো মানুষ গড়ার কারখানা। আমি যে বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করি তার নাম চাঁদগাজী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণি হতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়।

অবস্থান : আমাদের বিদ্যালয়টি ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া থানার চাঁদগাজী গ্রামে অবস্থিত।

বিদ্যালয় ভবন : আমাদের বিদ্যালয় ভবনটি পাকা। এটি উত্তর-দক্ষিণে লম্বা। এতে ১০টি কক্ষ আছে। এগুলোর ভেতর একটি প্রধান শিক্ষক সাহেবের কক্ষ, একটি শিক্ষকদের কক্ষ, একটি অফিস কক্ষ এবং একটি লাইব্রেরি কক্ষ। অন্য কক্ষগুলোতে ক্লাস হয়ে থাকে। 

ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকমÐলী : আমাদের বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ২০০। শিক্ষা দেওয়ার জন্য রয়েছেন ১০ জন সুযোগ্য শিক্ষক। শিক্ষকগণ আমাদেরকে অত্যন্ত আন্তরিকভাবে পড়ান।

লাইব্রেরি : আমাদের বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিটি বেশ সমৃদ্ধ। এখানে নানা ধরনের বই রাখা আছে। লাইব্রেরি থেকে বই ধার করে বাড়িতে নিয়েও পড়া যায়।

$ads={1}

খেলাধুলা : আমাদের বিদ্যালয়ের সামনে আছে বড় একটি খেলার মাঠ। এখানে আমরা খেলাধুলা করি। বিদ্যালয়ে একজন ক্রীড়া শিক্ষক আছেন। তিনি নিয়মিত খেলাধুলা ও শরীরচর্চা পরিচালনা করে থাকেন।

অনুষ্ঠান : আমাদের বিদ্যালয়ে নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য আমাদের বিদ্যালয়টির বেশ সুনাম রয়েছে। প্রতিবছর ফেব্রæয়ারি মাসে আমাদের বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসসহ বিভিন্ন দিবসে নানা রকম আয়োজন থাকে।

ফলাফল : প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় প্রতিবছর আমাদের বিদ্যালয় থেকে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিসহ আট-দশ জন ছাত্র-ছাত্রী অ+ পায়।

উপসংহার : আমাদের বিদ্যালয়টি একটি আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়। এরূপ একটি বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতে পেরে আমি সত্যিই গর্বিত।

 একজন বীরশ্রেষ্ঠ
অথবা, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা
অথবা, বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল রচনা তৃতীয় শেণি

সূচনা : বীরদের ভেতর শ্রেষ্ঠ যাঁরা, তাঁরাই বীরশ্রেষ্ঠ। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বীরের মতো লড়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। তাঁদের মধ্যে বিশেষ অবদানের কারণে কয়েকজন পেয়েছেন বীরশ্রেষ্ঠর মর্যাদা। বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল তেমনই একজন।

জন্ম পরিচয় : বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল ১৯৪৭ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার হাজিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম হাবিবুর রহমান। তিনি পেশায় সেনাবাহিনীর হাবিলদার ছিলেন।

শৈশব : ছেলেবেলায় মোস্তফা কামাল ছিলেন খুব দুরন্ত। লেখাপড়ায় বেশিদূর এগোতে পারেন নি। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন তিনি।

কর্মজীবন : সৈনিকদের সুশৃঙ্খল জীবন মোস্তফা কামালকে সৈনিক হতে উৎসাহিত করেছিল। ১৯৬৭ সালের ১৬ই ডিসেম্বর তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। প্রশিক্ষণ শেষে ১৯৬৮ সালে তিনি চতুর্থ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টে নিয়োগ পান।

$ads={1}

মুক্তিযুদ্ধে মোস্তফা কামালের অবদান : ১৯৭১ সালে যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়, মোস্তফা কামাল তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চতুর্থ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। এ সময়ে তিনি গঙ্গা সাগরের উত্তরে দরুইন গ্রামে স্থাপিত মুক্তিযোদ্ধা শিবিরে যোগদান করেন। ১৬ই এপ্রিল খবর পাওয়া গেল, পাকিস্তানি হানাদাররা মুক্তিযোদ্ধাদের ধ্বংস করার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে এগিয়ে আসছে। মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাগণ শত্রæ সেনাদের প্রতিরোধ করতে প্রস্তুত হলেন। ১৮ই এপ্রিল সকাল এগারোটায় শুরু হলো প্রচÐ বৃষ্টি। আর সেই সাথে মুক্তিবাহিনীর শিবির লক্ষ্য করে পাকিস্তানি বাহিনীর তুমুল গোলাবর্ষণ। বেলা বারোটায় আক্রমণ আরও তীব্র হলো। মুক্তিযোদ্ধাদের পাল্টা গুলি তার সামনে কিছুই না। হঠাৎ একজন মুক্তিযোদ্ধা গুলিবিদ্ধ হলেন। মোস্তফা কামাল এক মুহূর্ত দেরি না করে মেশিনগান চালাতে লাগলেন। এক সময় তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে সঙ্গীদের নিরাপদ স্থানে চলে যেতে বললেন। কেননা তা না হলে সবার মৃত্যু অবধারিত। সঙ্গীরা তাঁকে রেখে সাবধানে পিছু হটলেন। আর অবিরাম মেশিনগান চালিয়ে মোস্তফা কামাল ঠেকিয়ে রাখলেন শত্রæসেনাদের। একাই যেন হয়ে উঠেছিলেন মুক্তিবাহিনীর একটি দুর্গ। হঠাৎ শত্রæর গোলার আঘাতে তাঁর শরীর ঝাঁঝরা হয়ে গেল। তিনি শহিদ হলেন। তাঁর জীবনের বিনিময়ে রক্ষা পেল সঙ্গী মুক্তিযোদ্ধাদের মূল্যবান জীবন।

উপসংহার : মোস্তফা কামাল আমাদের গর্বিত সন্তান। দরুইনের মাটিতে সমাহিত হয়ে আছে এই অকুতোভয় বীরের ক্ষতবিক্ষত দেহ। তাঁর মনোবল ও আত্মদানের কথা দেশবাসী কোনোদিন ভুলবে না।

  একুশে ফেব্রুয়রি রচনা তৃতীয় শেণি

সূচনা : “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রæয়ারি

আমি কি ভুলিতে পারি?”

একুশে ফেব্রæয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনে একটি স্মরণীয় দিন। ১৯৫২ সালের এ দিনটিতে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে আন্দোলন করেছিল বীর বাঙালি। ভাষার জন্য জীবন দিয়েছিলেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিকসহ নাম না জানা অনেকে। তাই এই দিনটি আমাদের জন্য একই সাথে গৌরবের ও বেদনার। 

একুশে ফেব্রæয়ারির প্রেক্ষাপট : ১৯৫২ সালের ২৬ শে জানুয়ারি পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ঢাকায় এক জনসভায় একমাত্র উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেন। এর প্রতিবাদে বাংলার ছাত্র-জনতা আন্দোলনের ডাক দেয়। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রæয়ারি এ আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ লাভ করে। সরকারি নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে ছাত্র-জনতা মিছিল বের করে। পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালালে নিহত হয় অনেকে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে গোটা দেশের ছাত্র-জনতা। আন্দোলন আরও তীব্র হয়। এর ফলে পরবর্তীতে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাংলাকে পূর্ববাংলার রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়।

$ads={1}

একুশে ফেব্রæয়ারি পালন : প্রতি বছর নানা আয়োজনে এ দিনটি সরকারি ও বেসরকারিভাবে পালন করা হয়। সারা দেশের শহিদ মিনারগুলোতে ভোরবেলা শহিদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানানো হয়। স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা এদিন খালি পায়ে হেঁটে শহিদ মিনারে গিয়ে ফুল দেয়।

উপসংহার : একুশ আমাদের অহংকার। এ দিনটি মাতৃভূমি ও মাতৃভাষার প্রতি আমাদের ভালোবাসা বাড়িয়ে দেয়।  অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের শিক্ষা দেয়। একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা দেশের জন্য কাজ করব।

  বাংলাদেশের জাতীয় ফুল
অথবা, আমার প্রিয় ফুল 
রচনা তৃতীয় শেণি

সূচনা : বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা। এটি আমাদের দেশের অতি পরিচিত একটি ফুল। এদেশের দিঘি, খাল-বিল, ডোবা ইত্যাদি স্থানে শাপলা ফুটে থাকে। শাপলা আমার প্রিয় ফুল। 

বিবরণ : শাপলা হলো একটি লতাগুল্ম ধরনের জলজ উদ্ভিদ। অর্থাৎ এটি পানিতে জন্মায় ও বেড়ে ওঠে। এরা সাধারণত স্রোতবিহীন জলাশয়ে জন্মে। এর মূলটি জলাশয়ের নিচে কাদার ভেতরে থাকে। গোড়া থেকে নল বা ডাঁটা বৃদ্ধি পেয়ে একসময় পানির ওপর ভেসে ওঠে। শাপলার পাতাগুলো গোলাকৃতির এবং বড় বড়। থালার মতো দেখতে পাতাগুলো পানিতে ভেসে থাকে। কুঁড়ি অবস্থায় শাপলা দেখতে অনেকটা কলার মোচার মতো। বর্ষার মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু করে শরৎকালের শেষ অবধি এ ফুল ফুটতে দেখা যায়। আমাদের দেশে সাদা, লাল ইত্যাদি রঙের শাপলা ফোটে। তবে সাদা রঙের শাপলাই আমাদের জাতীয় ফুল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। 

সৌন্দর্য : সুগন্ধ না থাকলেও শাপলা দেখতে খুবই সুন্দর। বর্ষাকালে বিলে-ঝিলে ফুটে থাকা শাপলা দেখে মন ভরে যায়। 

ব্যবহার : শাপলা ফুল দিয়ে শিশুরা মালা গাঁথে। এর ডাঁটা তরকারি হিসেবে খাওয়া যায়। শাপলার শেকড় বা শালুক পুড়িয়ে বা সিদ্ধ করে খাওয়া হয়।

উপসংহার : শাপলা আমাদের জাতীয় প্রতীক। এদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম উপাদান। 

  বাংলাদেশের পাখি রচনা তৃতীয় শেণি

সূচনা : পাখিরা বাংলাদেশের প্রকৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ভোরবেলা পাখির কলকাকলিতে আমাদের ঘুম ভাঙে। বাংলাদেশে বিচিত্র বৈশিষ্ট্যের অসংখ্য পাখির অবস্থান থাকায় এ দেশকে বলা হয় পাখির দেশ।

পাখিদের বৈচিত্র্য : বাংলাদেশে প্রায় ৬৪টি প্রজাতির ৬০০ রকমের পাখির বাস। এর মধ্যে ৪০০ রকমের পাখি সারাবছর বাংলাদেশে অবস্থান করে। আর বাকিরা শীতের সময়ে অতিথি হয়ে এদেশে আসে। এখানে বাংলাদেশের নানা রকম পাখির পরিচয় তুলে ধরা হলোÑ

লোকালয়ের পাখি : লোকালয়ের পাখি বলতে আমরা বুঝি যেসব পাখি মানুষের কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করে তাদেরকে। এসব পাখির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কাক, বুলবুলি, চড়–ই, কোকিল, টুনটুনি, বাবুই, শালিক ইত্যাদি। এদের ভেতর দোয়েল আমাদের জাতীয় পাখি। এ পাখিগুলো সাধারণত কীটপতঙ্গ, ফুলের মধু ইত্যাদি খেয়ে থাকে।

$ads={1}

বুনো পাখি : যে সকল পাখি সচরাচর লোকালয়ে আসতে পছন্দ করে না তাদেরকে বুনো পাখি বলে। যেমনÑ ফিঙে, আবাবিল, বাঁশপাতি, বেনে বউ, জলময়ূর প্রভৃতি। 

জলচর পাখি : জলচর পাখিদের বিচরণ পুকুর, খাল-বিল ইত্যাদি স্থানে। এদের মধ্যে বেশি চোখে পড়ে মাছরাঙা, বক, পানকৌড়ি ইত্যাদি। ছোট মাছ, শামুক, গুগলি ইত্যাদি এদের প্রিয় খাবার। 

অন্যান্য পাখি : উপরে উল্লিখিত পাখিগুলো ছাড়াও আমাদের দেশে রয়েছে আরও অনেক পাখি। যেমন : টিয়া, ধনেশ, শ্যামা, ডাহুক, ঘুঘু, ময়না, শকুন, গাঙচষা ইত্যাদি। ময়না ও টিয়া পাখিকে মানুষ শখ করে পোষে।

উপকারিতা : পাখিরা নানাভাবে আমাদের উপকার করে। চড়–ই, টুনটুনি, বুলবুলি ইত্যাদি পাখি ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে কৃষকের উপকার করে। ফুলে ফুলে মধু খেয়ে পাখিরা পরাগায়ণে ভ‚মিকা রাখে। কাক, শকুন ইত্যাদি পাখি ক্ষতিকর বর্জ্য খেয়ে পরিবেশ সুন্দর রাখে।

উপসংহার : পাখিরা আমাদের পরম বন্ধু। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এদের ভ‚মিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বন্ধুর মতো এই পাখিদের ভালোবাসব, তাদের রক্ষা করব।

 মা/আমার মা রচনা তৃতীয় শেণি

সূচনা : ‘হেরিলে মায়ের মুখ,

দূরে যায় সব দুখ।’

আমাদের সবার জীবনে ‘মা’ একটি মধুমাখা নাম। পৃথিবীতে তিনিই সন্তানের সবচেয়ে আপনজন। আমিও আমার মাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি।

সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা : পৃথিবীতে মায়ের কাছে সবচেয়ে দামি তাঁর সন্তান। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর সকল ভাবনা সন্তানদের নিয়ে। সন্তান কিসে ভালো থাকবে, নিরাপদ থাকবেÑ তিনি সবসময় কেবল সে ভাবনাই ভাবেন। মায়ের দোয়া পেলে সন্তানের দুঃখ দূর হয়। মায়ের মমতা আমাদের চলার পথের পাথেয়।

আমার মা : আমার মা আমাকে অনেক স্নেহ করেন। সবসময় কাছে কাছে রাখেন। আমার অসুখ করলে মায়ের দুশ্চিন্তার শেষ থাকে না। রাত-দিন জেগে তিনি আমার সেবা করেন। আমার খুশির জন্য যা যা করা দরকার তার সবই মা করেন। 

বন্ধু হিসেবে মা : মা আমার শ্রেষ্ঠ বন্ধু। আমি মায়ের কাছে কোনো কিছুই গোপন করি না। তিনি আমার সব ভালো কাজে উৎসাহ দেন। মন্দ কাজ করলে বুঝিয়ে বলেন। কখনোই বকুনি দেন না। মায়ের কাছেই আমার যত আবদার।

অভিভাবক হিসেবে মা : মা আমাকে মানুষের মতো মানুষ হতে বলেন। তিনি আমার সেরা শিক্ষক। আমার পড়া তৈরিতে মা সাহায্য করেন। কঠিন বিষয়গুলো মা খুব সহজেই বুঝিয়ে দেন। 

উপসংহার : মা-ই আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ। আমি মাকে কষ্ট দিই না। নানা কাজে তাঁকে সাহায্য করি। সবসময় তাঁর কথামতো চলতে চেষ্টা করি।

 

---------❌--------


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন