|
তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ |
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় চতুর্থ পঞ্চম শ্রেণীতে বাংলা ব্যাকরণ সরাসরি প্রশ্ন হিসেবে না আসলেও এখানে ব্যাকরণ এর অনেক কিছুই আসে। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের পরবর্তী শ্রেণীতে ভালো করার জন্য বাংলা ব্যাকরণ সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি। তবে তৃতীয় চতুর্থ পঞ্চম শ্রেণির জন্য বাংলা ব্যাকরণ বাধ্যতামূলক নয়। শিক্ষার্থীরা ইচ্ছা করলে বাংলা ব্যাকরণ শিখে তাদের বাংলা জ্ঞানটাকে বাড়িয়ে নিতে পারে। আজকে আমরা বাংলা ব্যাকরণ তৃতীয় চতুর্থ এবং পঞ্চম শ্রেণীর জন্য কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।
{tocify} $title={Table of Contents}
বাংলা ব্যাকরণ এর নির্দিষ্ট বিষয়ে জানতে উপরের টেবিল অফ কন্টাক্ট থেকে বাছাই করে নিয়ে নির্দিষ্ট বিষয়টি পড়তে পারেন
বাংলা ব্যাকরণ
প্রতিটি ভাষাই শুদ্ধভাবে বুঝতে, পড়তে, বলতে ও লিখতে হলে কিছু নিয়মকানুন জানতে হয়। এ নিয়মকানুনগুলোকে একসাথে বলা হয় ব্যাকরণ। বাংলা ভাষা শেখার জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু নিয়মকানুন।
👉যে নিয়মগুলো জানলে শুদ্ধভাবে বাংলা ভাষা বুঝতে, পড়তে, বলতে ও লিখতে পারা যায়, সেগুলোকে একত্রে বাংলা ব্যাকরণ বলা হয়।
ভাষা-৩য়,৪র্থ,৫ম শ্রেণি
আমি আমার মাকে ভালোবাসি।
উপরের বাক্যটিতে মায়ের প্রতি আমাদের ভালোবাসার কথা প্রকাশিত হয়েছে। আমাদের মনের এই ভাবটি কাউকে বোঝানোর জন্য আমরা তাকে কথাটি বলতে পারি বা লিখে বোঝাতে পারি। যেভাবেই তা করি না কেন উভয় ক্ষেত্রেই আমাদের কিছু ধ্বনি বা চিহ্ন ব্যবহার করতে হবে।
👉মানুষ তার মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য যেসব অর্থবোধক ধ্বনি বা চিহ্ন ব্যবহার করে তাকে ভাষা বলে। যেমনÑ বাংলা ভাষা, ইংরেজি ভাষা, আরবি ভাষা ইত্যাদি।
✅ মাতৃভাষা :
I love my mother.
اَنَا اهِبُّ اُمِّىْ (আনা উহিব্বু উম্মি)
আমি আমার মাকে ভালোবাসি।
উপরে উল্লেখিত বাক্যগুলো লক্ষ কর। তিনটি বাক্যের অর্থ একই। প্রথম দুটি বাক্য আমরা সবাই ঠিকমতো বুঝতে নাও পারি। কিন্তু তৃতীয় বাক্যটি সহজেই বুঝতে পারছি। এর কারণ বাক্যটি আমাদের মাতৃভাষা বাংলায় লেখা হয়েছে।
মায়ের কাছ থেকে শিশু জন্মের পর যে ভাষা শেখে তা-ই তার মাতৃভাষা। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। ইংরেজদের মাতৃভাষা ইংরেজি। আরবদের আরবি।
✅ ভাষার রূপ ও রীতি :
ভাষার মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশের দুটি উপায় রয়েছে। একটি কথা বলে, আরেকটি লিখে।
কথা বলার ভাষাকে বলা হয় কথ্য ভাষা। আর লেখার ভাষাকে বলে লেখ্য ভাষা। নিচের ছকটি লক্ষ করি :
✅ আঞ্চলিক ভাষা ও প্রমিত ভাষা :
নিচের বাক্য দুটি খেয়াল করি :
"ঔগ্গোয়া মাইন্ষ্যের দুয়া পোয়া আছিল্।
একজনের দুটো ছেলে ছিল।"
আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের রয়েছে নিজস্ব ভাষারীতি। এ রীতিকে বলা হয় আঞ্চলিক ভাষা। প্রথম বাক্যটি চট্টগ্রাম অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষারীতি। আবার এই কথাটিই নোয়াখালী অঞ্চলের মানুষেরা তাদের আঞ্চলিক ভাষায় বলবেÑ ‘অ্যাকজনের দুই হুত আছিল্।’ আঞ্চলিক ভাষা একেক স্থানে একেক রকম বলে এক অঞ্চলের মানুষের পক্ষে অন্য অঞ্চলের ভাষা বোঝা কঠিন হয়। আবার উপরের দ্বিতীয় বাক্যটি এদেশের সব অঞ্চলের মানুষই বুঝতে পারবে। এভাবে সব ধরনের ভাষারীতিরই এমন একটি রূপ রয়েছে যেটির মাধ্যমে সকল শ্রেণির মানুষের কাছেই মনের ভাব প্রকাশ করা সম্ভব হয়। এই রূপটির নাম প্রমিত ভাষা।
✅ সাধু ও চলিত ভাষা :
নিচের বাক্য দুটি পড়ি
"তাহারা ফুল তুলিতেছে।
তারা ফুল তুলছে।"
দুটি বাক্যের মধ্যে পার্থক্য লক্ষ কর। প্রথম বাক্যের সর্বনাম পদ (তাহারা)-টির আকার দ্বিতীয় বাক্যের সর্বনাম পদ (তারা)-এর চেয়ে বড়। আবার প্রথম বাক্যের ক্রিয়াপদ (তুলিতেছে)-এর আকার দ্বিতীয় বাক্যের ক্রিয়াপদ (তুলছে)-এর তুলনায় বড়। আকারে বড় অর্থাৎ প্রথম রূপটির নাম সাধু ভাষা, আর আকারে ছোট অর্থাৎ দ্বিতীয় রূপটির নাম চলিত ভাষা। সাধুভাষা মূলত ব্যবহার করা হয় সাহিত্য রচনায় বা বই পুস্তকে। কথা বলার জন্য আমরা সাধু ভাষা ব্যবহার করি না। চলিত ভাষাতেই আমরা সাধারণত কথা বলে থাকি। তবে বর্তমানে লেখালেখির ক্ষেত্রেও চলিত ভাষার ব্যবহারই বেশি চোখে পড়ে।
$ads={1}
সাধু ভাষা : যে ভাষা সাধারণত সাহিত্য রচনায় ব্যবহার করা হয় বা বই-পুস্তকে লেখা হয়, তাকে সাধু ভাষা বলে।
চলিত ভাষা : যে ভাষায় আমরা সাধারণত কথা বলে থাকি, তাকে চলিত ভাষা বলে
ধ্বনি-৩য়,৪র্থ,৫ম শ্রেণি
বই = ব্ + অ + ই
লক্ষ কর, ‘বই’ একটি শব্দ। শব্দটিকে ভাগ করলে আমরা ‘ব’ এবং ‘ই’-এ দুটি বর্ণ পাই। আরও ভাগ করলে পাই ব, অ এবং ই- এই তিনটি ধ্বনি। ‘বই’ শব্দটি উচ্চরণের সময় এ ধ্বনিগুলো আমাদের কণ্ঠ থেকে বেরিয়ে আসে। এগুলো হচ্ছে ‘বই’ শব্দের ক্ষুদ্রতম একক। অর্থাৎ এরপর শব্দটিকে আর কোনো ক্ষুদ্রতর অংশে ভাগ করা যায় না।
👉শব্দের ক্ষুদ্রতম অংশের নাম হলো ধ্বনি।
কথা বলার জন্য বা যে কোনো কিছু উচ্চারণের জন্য আমরা আমাদের কিছু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাহায্য নিই। যেমনÑ কণ্ঠনালি, মুখগহŸর, দাঁত, ঠোঁট, নাক, জিহŸা ইত্যাদি। এই সবগুলোকে একসাথে বলা হয় বাগযন্ত্র। বাগযন্ত্রের সাহায্যে নানা রকম ধ্বনি তৈরি হয়। আমাদের উচ্চারিত আওয়াজগুলো বাগযন্ত্রে বাধা না পেলে সৃষ্টি হয় এক রকম ধ্বনি, আর বাধা পেলে সৃষ্টি হয় আরেক রকমের ধ্বনি।
✅ ধ্বনি দুই প্রকারঃ স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি।
তোমরা ‘আ’ এবং ‘প’ ধ্বনি দুটো উচ্চারণ কর। দেখবে ‘আ’ ধ্বনিটি উচ্চারণের সময় ফুসফুস থেকে আসা বাতাস বাগযন্ত্রের কোথাও বাধা পাচ্ছে না। আবার লক্ষ কর, এই ধ্বনিটি উচ্চারণের সময় এর সাথে অন্য কোনো ধ্বনি উচ্চারিত হচ্ছে না। অর্থাৎ এই ধ্বনিটি অন্য কোনো ধ্বনির সাহায্য ছাড়াই উচ্চারিত হতে পারে। এ ধরনের ধ্বনিকে বলা হয় স্বরধ্বনি।
👉 যেসব ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস থেকে বের হওয়া বাতাস বাগযন্ত্রের কোথাও বাধা পায় না এবং উচ্চারণের সময় অন্য কোনো ধ্বনির সাহায্য প্রয়োজন হয় না সেগুলোকে স্বরধ্বনি বলে। যেমন : অ, আ, ই, ঈ ইত্যাদি।
আবার লক্ষ কর, ‘প’ ধ্বনিটি উচ্চারণের সময় ফুসফুস থেকে নির্গত বাতাস বাধা পাচ্ছে। বাতাস এসে দুই ঠোঁটে আটকে যাচ্ছে। আরেকটি বিষয় লক্ষ কর, প = প্ + অ। ‘প’ ধ্বনিটি উচ্চরণের সময় আমাদেরকে ‘অ’ ধ্বনিটিও উচ্চারণ করতে হচ্ছে। অর্থাৎ উচ্চারণের ক্ষেত্রে অন্য একটি স্বরধ্বনির সাহায্য লাগছে। এ ধরনের ধ্বনির নাম হচ্ছে ব্যঞ্জনধ্বনি।
👉 যেসব ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস থেকে বের হওয়া বাতাস কোথাও না কোথাও বাধা পায় এবং উচ্চারণে স্বরধ্বনির সাহায্য প্রয়োজন হয়, সেগুলোকে ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। উদাহরণ : ক, ঘ, চ, প ইত্যাদি।
বর্ণ-৩য়,৪র্থ,৫ম শ্রেণি
মানুষের মুখ থেকে বায়ু বের হওয়ার মাধ্যমে ধ্বনির সৃষ্টি। এগুলোর কোনো আকার নেই। এগুলো মানুষ কেবল মুখে উচ্চারণ করে ও কানে শোনে। ধ্বনিগুলোকে চেনার জন্য কিছু প্রতীক তৈরি করা হয়েছে। এই প্রতীকের নাম বর্ণ। বর্ণ হচ্ছে ধ্বনির লিখিত রূপ।
👉 ধ্বনি নির্দেশক চিহ্নকে বর্ণ বলা হয়। যেমন : বই = ব + ই। এখানে ‘ব’ এবং ‘ই’ হলো বর্ণ।
বাংলা ভাষায় মোট ৫০টি বর্ণ আছে। সবগুলোকে একত্রে বলা হয় বর্ণমালা।
✅ বর্ণ দুই প্রকারঃ স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ।
স্বরবর্ণগুলো স্বাধীন। অর্থাৎ স্বরবর্ণগুলো উচ্চারণে অন্য কোনো বর্ণের সাহায্য লাগে না।
👉 যে সকল বর্ণ অন্য বর্ণের সাহায্য ছাড়াই উচ্চারিত হতে পারে সেগুলোকে স্বরবর্ণ বলে। বাংলা বর্ণমালায় মোট ১১টি স্বরবর্ণ আছে। এগুলো হলোÑ অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ, এ, ঐ, ও, ঔ।
অন্যদিকে ব্যঞ্জনবর্ণগুলো উচ্চারণে স্বরবর্ণের সাহায্য প্রয়োজন হয়। যেমনÑ ‘ক’ উচ্চারণ করতে ‘ক’-এর সাথে একটি অতিরিক্ত বর্ণ অ উচ্চারণ করতে হয়। উদাহরণ : ক্ + অ = ক।
👉 যে সকল বর্ণ স্বরবর্ণের সাহায্য ছাড়া নিজে নিজে উচ্চারিত হতে পারে না সেগুলোকে ব্যঞ্জনবর্ণ বলে। যেমনÑ ক, খ, গ, ঘ, ঙ ইত্যাদি। বাংলা বর্ণমালায় ব্যঞ্জনবর্ণ ৩৯টি।
✅ যুক্তবর্ণ : এক বর্ণের সাথে অন্য বর্ণ যুক্ত করে যুক্তবর্ণ গঠন করা হয়। যেমনÑ ক্ + ষ = ক্ষ, ত + ম = ত্ম ইত্যাদি।
যুক্তবর্ণ দিয়ে গঠিত কয়েকটি শব্দ দেখে নিই :
ক্ষ = ক + ষ → ক্ষমা ল্ল = ল + ল → উল্লাস
ব্দ = ব + দ → শব্দ ন্ত = ন + ত → শান্ত
প্ত = প + ত → গুপ্ত প = ল + প → অল্প
শব্দ-তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির
আমরা কথা বলার সময় অনেক রকম শব্দ উচ্চারণ করি। শব্দ তৈরি হয় কয়েকটি বর্ণের সংযোগের ফলে। কিন্তু লক্ষ কর :
ম + ল + ক = মলক
এখানে তিনটি বর্ণের সংযোগ ঘটেছে ঠিকই কিন্তু ‘মলক’ কোনো অর্থ প্রকাশ করে না। তাই এটিকে কোনো শব্দ বলা যাবে না।
আবার লক্ষ কর : ক + ল + ম = কলম
একই বর্ণগুলো মিলিত হয়ে একটি অর্থ প্রকাশ করেছে। তাই ‘কলম’ একটি শব্দ।
👉 কতগুলো বর্ণ একত্রে মিলিত হয়ে কোনো অর্থ প্রকাশ করলে ঐ বর্ণের সমষ্টিকে একত্রে শব্দ বলা হয়।
বাক্য-তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির
কতগুলো শব্দ একসাথে মিলিত হয়ে একটি বাক্য গঠন করে।
এখন লক্ষ কর : ভোরে ঘুম কামাল ওঠে থেকে।
এখানে কতগুলো শব্দ পাশাপাশি বসলেও এটিকে একটি বাক্য বলা যায় না। কেননা শব্দগুচ্ছের মাধ্যমে এখানে অর্থপূর্ণ কোনো মনের ভাব প্রকাশিত হয়নি। আবার দেখ :
কামাল ভোরে ঘুম থেকে ওঠে।
এক্ষেত্রে শব্দগুলো মিলিত হয়ে একটি সম্পূর্ণ মনের ভাব প্রকাশে সক্ষম হয়েছে।
👉 দুই বা ততোধিক শব্দ মিলিত হয়ে যখন মনের ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করে তখন সেই শব্দগুচ্ছকে একত্রে বাক্য বলা হয়।
পদ প্রকরণ-তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির
মনে কর, বাড়িতে মা নানা রকম পিঠা বানিয়েছেন। পুলি পিঠা, চিতই পিঠা, ভাপা পিঠা ইত্যাদি। পিঠা খেয়ে আমরা বলি অনেক পদের পিঠা খেলাম। আমরা যে পিঠাগুলো খেলাম তার সবগুলোর বৈশিষ্ট্য এক রকম নয়। পিঠাগুলোর আকার, উপাদান ও স্বাদে আছে নানা বৈচিত্র্য। তেমনিভাবে একটি বাক্য যেসব শব্দ নিয়ে গঠিত হয় সেগুলোর মাঝেও থাকে নানা রকম বৈচিত্র্য।
নিচের বাক্যটি পড় :
সেলিম ও তার ভাই ফুটবল ভালো খেলে।
লক্ষ কর, ‘সেলিম’ এবং ‘ফুটবল’ শব্দ দুটি দ্বারা কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর নাম বোঝাচ্ছে। ‘ও’ শব্দটি সেলিম ও তার ভাইয়ের মাঝে সম্পর্ক তৈরি করেছে। ‘ভালো’ শব্দটির মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারছি সেলিম ও তার ভাই খেলাধুলায় কেমন দক্ষ। আর ‘খেলে’ শব্দটি একটি কাজ সম্পর্কে বলছে। সুতরাং আমরা দেখতে পাচ্ছি, এই প্রতিটি শব্দেরই আছে আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য।
👉 একটি বাক্য যেসব শব্দ দিয়ে গঠিত হয় তাদের প্রতিটিকে পদ বলা হয়।
✅ প্রকারভেদ :
পদ পাঁচ প্রকার। যথাঃ
- ১. বিশেষ্য
- ২. বিশেষণ
- ৩. সর্বনাম
- ৪. অব্যয়
- ৫. ক্রিয়া।
👉 বিশেষ্য পদ : যে পদ দিয়ে কোনো কিছুর নাম বোঝায় তাকে বিশেষ্য পদ বলে। যেমনÑ সুমন, ঢাকা, সূর্য ইত্যাদি।
👉 বিশেষণ পদ : যে পদ দিয়ে অন্য পদের দোষ, গুণ, অবস্থা, সংখ্যা, পরিমাণ ইত্যাদি বোঝায় তাকে বিশেষণ পদ বলে। যেমনÑ বুদ্ধিমান বালক। সুন্দর ফুল ইত্যাদি। এখানে বুদ্ধিমান ও সুন্দর হচ্ছে বিশেষণ পদ।
👉 সর্বনাম পদ : যে পদ বিশেষ্য পদের পরিবর্তে বসে তাকে সর্বনাম পদ বলে। উদাহরণÑ রাজু ভালো ছেলে। সে স্কুলে যায়। তার বয়স আট বছর। তাকে সবাই ভালোবাসে। এখানে ‘রাজু’র পরিবর্তে সে, তার, তাকে ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে সর্বনাম পদ।
👉 অব্যয় পদ : যে পদের কোনো ব্যয় বা পরিবর্তন হয় না তাকে অব্যয় পদ বলে। যেমন : মশা আর মশা। সে গরিব কিন্তু সৎ। এখানে আর, কিন্তু হচ্ছে অব্যয় পদ।
👉 ক্রিয়াপদ : যে পদ দিয়ে কোনো কাজ করা বোঝায় তাকে ক্রিয়া পদ বলে। উদাহরণÑ সে বাড়ি যাচ্ছে। রিমা ভাত খায়। এখানে যাচ্ছে, খায় হচ্ছে ক্রিয়াপদ।
লিঙ্গ-তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির
বাবা, মা, শিশু, বাড়ি
উপরের শব্দগুলো লক্ষ কর। প্রতিটি শব্দেরই রয়েছে বিশেষ একটি বৈশিষ্ট্য। যেমন : ‘বাবা’ বললে আমরা একজন পুরুষ মানুষকে বুঝি। ‘মা’ বললে একজন স্ত্রীলোক বা নারীকে বুঝি। ‘শিশু’ বললে আমরা ভেবে নিই ছেলে বা মেয়ে যে কোনো একটি হবে। আর প্রথম তিনটি শব্দ থেকে শেষ শব্দটি আরেকটি দিক থেকে আলাদা। তা হলো প্রথম তিনটি শব্দ জীবজগতের অন্তর্ভুক্ত, অর্থাৎ সবারই জীবন আছে। আর শেষ শব্দটি জড়বস্তু, অর্থাৎ এর জীবন নেই। এবং এটি নারী-পুরুষ কোনোটিই বোঝায় না।
👉 যেসব শব্দ দিয়ে আমরা নারী, পুরুষ অথবা নারী-পুরুষ দুটিকেই কিংবা এগুলোর কোনোটিকেই বুঝি না সেগুলোকেই লিঙ্গ বলা হয়। লিঙ্গ শব্দের অর্থ চিহ্ন বা লক্ষণ।
✅ প্রকারভেদ :
লিঙ্গ চার প্রকার। যাথা-
- ১. পুংলিঙ্গ,
- ২. স্ত্রীলিঙ্গ,
- ৩. ক্লীবলিঙ্গ ও
- ৪. উভয়লিঙ্গ।
👉 পুংলিঙ্গ : যেসব শব্দ দিয়ে পুরুষ জাতি বোঝায়, সেগুলোকে পুংলিঙ্গ বলে। যেমনÑ বাবা, চাচা, ভাই, ছাত্র ইত্যাদি।
👉 স্ত্রীলিঙ্গ : যেসব শব্দ দিয়ে স্ত্রী জাতি বা নারী জাতি বোঝায়, সেগুলোকে স্ত্রীলিঙ্গ বলে। যেমন- মা, বোন, মামি, খালা, ছাত্রী ইত্যাদি।
👉 উভয়লিঙ্গ : যেসব শব্দ দিয়ে স্ত্রী-পুরুষ উভয়কেই বোঝায় সেগুলোকে উভয়লিঙ্গ বলে। যেমনÑ সন্তান, মানুষ, শিশু, বাছুর, পশু, বোকা ইত্যাদি।
👉 ক্লীবলিঙ্গ : যেসব শব্দ দিয়ে স্ত্রী-পুরুষ কোনোটাই না বুঝিয়ে জড় পদার্থ বোঝায় সেগুলোকে ক্লীবলিঙ্গ বলে। যেমনÑ বই, খাতা, কলম, টেবিল, চেয়ার, দরজা, পাথর ইত্যাদি।
✅ লিঙ্গান্তর :
পুংলিঙ্গ বা পুরুষবাচক শব্দকে স্ত্রীলিঙ্গ বা স্ত্রীবাচক শব্দে রূপান্তর করাকে লিঙ্গান্তর বা লিঙ্গ পরিবর্তন বলা হয়। নিচে লিঙ্গ পরিবর্তনের কিছু উদাহরণ দেখানো হলো :
পুংলিঙ্গ স্ত্রীলিঙ্গ পুংলিঙ্গ স্ত্রীলিঙ্গ
বাবা → মা ছাত্র →ছাত্রী
পুত্র → কন্যা রাজা → রানি
ভাই → বোন শিক্ষক → শিক্ষিকা
চাচা → চাচি নর → নারী
মামা → মামি খোকা → খুকি
নানা → নানি চাকর → চাকরানি
দাদা → দাদি সুন্দর → সুন্দরী
খালু → খালা তরুণ → তরুণী
স্বামী → স্ত্রী পাত্র → পাত্রী
গায়ক → গায়িকা সিংহ → সিংহী
বৃদ্ধ → বৃদ্ধা বাঘ → বাঘিনী
বচন-তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির
মনে কর, তুমি মাঠে একা দৌড়াচ্ছ। এক্ষেত্রে তুমি বলতে পারÑ ‘আমি মাঠে দৌড়াচ্ছি।’ আবার ধর তুমি তোমার বন্ধুদের সাথে মাঠে দৌড়াচ্ছ। তখন বললেÑ ‘আমরা মাঠে দৌড়াচ্ছি’। সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ‘আমি’ পরিবর্তিত হয়ে ‘আমরা’ হয়ে গেল। এভাবে সংখ্যার ধারণা পাওয়ার নামই বচন।
👉 যা দিয়ে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর সংখ্যা বোঝায় তাকে বচন বলা হয়। যেমন একটি কলম, কলমগুলো ইত্যাদি। এখানে ‘একটি’ ও ‘গুলো’ শব্দ দুটো দিয়ে কলমের সংখ্যা বোঝায়। সুতরাং একটি ও গুলো হচ্ছে বচন।
প্রকারভেদ :
বচন দুই প্রকার। যথা-
👉 একবচন : যে শব্দ দিয়ে একজন ব্যক্তি বা একটি বস্তু বোঝায় তাকে একবচন বলে। যেমন : কলম, মেয়ে, একখানা ইত্যাদি।
👉 বহুবচন : যে শব্দ দিয়ে একের বেশি ব্যক্তি বা বস্তু বোঝায় তাকে বহুবচন বলে। যেমন : কলমগুলো, আমরা, মেয়েগুলো ইত্যাদি।
একবচন ও বহুবচনের কিছু উদাহরণ :
একবচন বহুবচন একবচন বহুবচন
আমি → আমরা কলম → কলমগুলো
তুমি → তোমরা মানুষ → মানুষগুলো
আমার → আমাদের পাখি → পাখিগুলো
সে → তারা ছেলে → ছেলেগুলো
যে → যারা শ্রমিক → শ্রমিকেরা
পর্বত → পর্বতমালা দর্শক → দর্শকবৃন্দ
শিক্ষক → শিক্ষকমণ্ডলী লেখক → লেখকগণ
তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির সন্ধি
নিচের বাক্যটি লক্ষ কর :
হেমন্তে নবান্ন উৎসব হয়।
হেমন্ত ঋতুতে কৃষকের ঘরে ঘরে নতুন ধান ওঠে। নতুন ধান দিয়ে যে উৎসব হয় তারই নাম নবান্ন। ‘নবান্ন’ শব্দটিতে দুটি শব্দ যুক্ত অবস্থায় আছে ‘নব’ ও ‘অন্ন’। ‘নব’ অর্থ- নতুন আর ‘অন্ন’ অর্থ - খাবার। লক্ষ কর, আমরা দ্রæত কথা বলার কারণে কখনো কখনো পাশাপাশি অবস্থিত দুটি শব্দের ধ্বনি মিলে এক হয়ে যায়। কখনো কখনো সৃষ্টি হয় নতুন ধ্বনিও।
যেমন : নব = ন্ + অ + ব্ + অ
অন্ন = অ + ন + অ + ণ্ + অ
দুটি শব্দের শেষ ধ্বনি ‘অ’। এখানে অ + অ = আ হয়ে গেছে। ফলে, নব + অন্ন = নবান্ন হয়েছে। একইভাবে, বিদ্যা + আলয় = বিদ্যালয় হয়েছে।
দ্রæত উচ্চারণের ফলে এভাবে পাশাপাশি ধ্বনির মিলে যাওয়াকেই সন্ধি বলা হয়। সন্ধি শব্দের অর্থ মিলন।
👉 পাশাপাশি অবস্থিত দুটি ধ্বনি মিলে যদি একটি ধ্বনির সৃষ্টি হয় তবে তাকে সন্ধি বলে।
সন্ধি দুটি উপায়ে হতে পারে:
স্বরধ্বনির সঙ্গে স্বরধ্বনি মিলে যে সন্ধি হয় তাকে স্বরসন্ধি বলে। যেমন- বিদ্যা + আলয় = বিদ্যালয়।
ব্যঞ্জনধ্বনির সঙ্গে স্বরধ্বনি বা ব্যঞ্জনধ্বনি মিলে যে সন্ধি হয় তাকে ব্যঞ্জন সন্ধি বলে। যেমন- দিক্ + অন্ত = দিগন্ত।
✅ বাংলা ভাষায় সন্ধির প্রয়োজনীয়তা :
- সন্ধি বাক্যকে সুন্দর ও মধুর করে।
- উচ্চারণকে সহজ করে।
- বাক্যকে সংক্ষিপ্ত করে।
- নতুন নতুন শব্দের সৃষ্টি করে।
✅ সন্ধি বিচ্ছেদ :
সন্ধির মাধ্যমে দুটি শব্দ একত্রিত হয়ে নতুন একটি শব্দ গঠন করে। সন্ধিযোগে গঠিত এই শব্দটির দুটি অংশ ভাগ করে দেখানোকেই সন্ধি বিচ্ছেদ বলা হয়। নিচে সন্ধি বিচ্ছেদের কিছু উদাহরণ দেখান হলো :
বিদ্যালয় = বিদ্যা + আলয় পরীক্ষা = পরি + ইক্ষা
সিংহাসন = সিংহ + আসন অতীত = অতি + ইত
সূর্যোদয় = সূর্য + উদয় জলাশয় = জল + আশায়
ইত্যাদি = ইতি + আদি নয়ন = নে + অন
দিগন্ত = দিক্ + অন্ত নরাধম = নর + অধম
জীবাণু = জীব + অণু প্রতিচ্ছবি = প্রতি + ছবি
উল্লাস = উৎ + লাস উজ্জ্বল = উৎ + জ্বল
সংসার = সম্ + সার সংবাদ = সম্ + বাদ
তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বাগধারা
নিচের বাক্যটি লক্ষ কর :
সেলিম অগাধ জলের মাছ।
প্রশ্ন জাগতে পারে, একজন মানুষ কীভাবে অগাধ অর্থাৎ গভীর জলের মাছ হতে পারে। আসলে এখানে ‘অগাধ জলের মাছ’ কথাটি একটি বিশেষ অর্থ বোঝাচ্ছে। এর অর্থ হচ্ছে- ‘সুচতুর ব্যক্তি’। বাংলা ভাষায় এরকম কিছু শব্দগুচ্ছ আছে যেগুলো বাক্যে বসে যা লেখা থাকে তা না বুঝিয়ে অন্য একটি বিশেষ অর্থকে বোঝায়। এ ধরনের শব্দগুচ্ছ ‘বাগধারা’ নামে পরিচিত।
নিচে কতগুলো বাগধারা ও বাক্যে তাদের প্রয়োগ দেখানো হলো :
অরণ্যে রোদন (নিষ্ফল আবেদন) - ভিক্ষুকটির অরণ্য রোদনে কেউ সাড়া দিল না।
অক্কা পাওয়া (মরে যাওয়া) - গণপিটুনিতে পকেটমার অক্কা পেল।
অর্ধচন্দ্র (গলাধাক্কা) - বেয়াদব ছেলেটাকে অর্ধচন্দ্র দিয়ে বিদায় করে দাও।
অগাধ জলের মাছ (সুচতুর ব্যক্তি) - চৌধুরী সাহেব অগাধ জলের মাছ।
আমড়া কাঠের ঢেঁকি (অপদার্থ) - তুমি হলে আমড়া কাঠের ঢেঁকি, তোমাকে দিয়ে কিছুই হবে না।
আক্কেল সেলামি (বোকামির দÐ) - না বুঝে কাজ করলে আক্কেল সেলামি দিতে হয়।
উড়নচÐী (অমিতব্যয়ী) Ñ উড়নচÐী লোকদের ভবিষ্যৎ ভালো নয়।
ইঁদুর কপালে (মন্দভাগ্য) - ফরহাদ ইঁদুর কপালে, তাই এত পড়েও পাশ করল না।
ইঁচড়ে পাকা (অকালপক্ব) - ছেলেটা ইঁচড়ে পাকা বলেই বড়দের সঙ্গে অমন করে তর্ক করছে।
এলাহি কাÐ (বিরাট ব্যাপার) - এতো সব আয়োজন! মনে হচ্ছে কোনো এলাহি কাÐ ঘটেছে।
কৈ মাছের প্রাণ (যা সহজে মরে না) - চোরটার কৈ মাছের প্রাণ, গণপিটুনি খেয়েও বেঁচে গেল।
গোঁফ খেজুরে (অলস) - গোঁফ খেজুরে মানুষের উন্নতি হয় না।
গোড়ায় গলদ (শুরুতে ভুল) - এ অঙ্ক মিলবে না, কারণ গোড়াতেই তো গলদ রয়েছে।
ঘোড়ার ডিম (অবাস্তব বস্তু) - পড়াশোনা না করলে পরীক্ষায় ঘোড়ার ডিম পাবে।
চোখের বালি (অপ্রিয়/চক্ষুশূল লোক) - মা-মরা ছেলেটি সৎ মায়ের চোখের বালি।
চোখের মণি (অতি প্রিয়) - একমাত্র ছেলেটি মায়ের চোখের মণি।
ঠোঁটকাটা (স্পষ্টভাষী) Ñ ঠোঁটকাটা লোকেরা সবকথা সামনাসামনিই বলে।
ডুমুরের ফুল (অদৃশ্য বস্তু) - চাকরি পেয়ে রফিক ডুমুরের ফুল হয়ে উঠেছে, দেখাই পাওয়া যায় না।
থ বনে যাওয়া (স্তম্ভিত হওয়া) - তার কাÐ দেখে আমরা থ বনে গেলাম।
দহরম মহরম (ঘনিষ্ঠতা) - আমার সঙ্গে কবিরের খুব দহরম মহরম।
দুধের মাছি (সুসময়ের বন্ধু) - টাকা থাকলে দুধের মাছির অভাব হয় না।
পটল তোলা (মারা যাওয়া) - অনেকদিন অসুস্থ থাকার পর লোকটি পটল তুলল।
ভরাডুবি (সর্বনাশ) - দোকানে আগুন লেগে ফজলু মিঞার ভরাডুবি হয়েছে।
ভিজে বিড়াল (কপটচারী, ভÐ) - সে একজন ভিজে বেড়াল, তাকে চেনা সহজ নয়।
হ-য-ব-র-ল (বিশৃঙ্খলা) - জিনিসপত্র ছড়িয়ে ঘরটাকে তো একেবারে হ-য-ব-র-ল করে রেখেছে।
হাতের পাঁচ (শেষ সম্বল) - এ টাকা কটিই আমার হাতের পাঁচ।