প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমের বৈশিষ্ট্যসমূহ
প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনে এবং শিশুদের মাঝে সর্বোচ্চ কাংখিত ফলাফল পেতে এর যথাযথ বাস্তবায়নে নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য, ভৌত সুবিধাদি এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ বিবেচনা করা জরুরি। বাস্তবায়নের গুণগত মানকে একটি কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে নিয়ে যেতে এবং বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এমনভাবে এই বৈশিষ্ট্য, সুবিধাদি ও বিষয়ের কথা চিন্তা করা হয়েছে যেন বর্তমানে সমভাবে নিশ্চিত করা না গেলেও সময়ের সংঙ্গে সংঙ্গে তা পর্যায়ক্রমে অর্জন করা যায়। নিম্নে বৈশিষ্ট্য, সুবিধাদি ও বিষয়সমূহের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হলো।
প্রাক প্রাথমিক শ্রেণিতে শিশুর সংখ্যা
একটি প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে সর্বোচ্চ ৩০ জন শিশুর উপস্থিতি চিন্তা করে শিক্ষাক্রমের লক্ষ্য অর্জনে নির্ধারিত শিখন-শেখানো প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ৩০ জনের অধিক শিশু একটি শ্রেণিতে থাকলে শিখন- শেখানো প্রক্রিয়া পরিচালনায় যেমন শিক্ষক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হবেন, তেমনি প্রয়োজনীয় উপকরণের স্বল্পতা শিশুর যথাযথ শিখনের অন্তরায় হবে। সুতরাং একটি প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে সর্বোচ্চ ৩০ জন শিশু থাকা বাঞ্ছনীয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ নিয়ম মেনে চলা সম্ভব না হলে পর্যায়ক্রমে যাতে তা অর্জন করা যায় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
প্রাক প্রাথমিক শ্রেণির শ্রেণিকক্ষের আকার, আকৃতি, আয়তন
৩০ জন শিশুর একটি প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে কমপক্ষে একজন শিক্ষক সার্বক্ষণিক উপস্থিত থাকবেন। তবে যথাযথভাবে শিখন-শেখানো প্রক্রিয়া পরিচালনা এবং শিখনের গুণগত মানের উন্নয়ন ঘটাতে এক থেকে দুই জন স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষক/অভিভাবক এর সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষক/অভিভাবকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের প্রযোজনীয়তা রয়েছে। ৩০ জন শিশু নিয়ে ন্যূনতম মান বজায় রেখে শিক্ষাক্রমের শিখন-শেখানো কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অন্তত ২৫০ বর্গফুট মাপের একটি শ্রেণিকক্ষের প্রয়োজন। শ্রেণিকক্ষটি খোলামেলা ও আলো-বাতাসপূর্ণ হওয়া বাঞ্ছনীয়। শ্রেণিকক্ষ কিংবা শ্রেণিকক্ষ সংলগ্ন হাত ধোয়ার জায়গা এবং শিশুদের ব্যবহার উপযোগী টয়লেট থাকতে হবে। শিখন-শেখানো কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কাজ ও খেলা পরিচালনার জন্য শ্রেণিকক্ষের বাইরে খোলা জায়গা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাক প্রাথমিক শ্রেণিতে প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ও স্টেশনারি
প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার শ্রেণিকক্ষ যথাসম্ভব খোলা বা উন্মুক্ত রাখা প্রয়োজন যেন শিশুরা চলাফেরার যথেষ্ট জায়গা পায়। শিশুদের বসার জন্য মাদুর থাকতে পারে যেন শিশু ইচ্ছেমত নিজের অবস্থান পরিবর্তন করতে পারে এবং আরাম করে বসতে পারে। ডেস্ক ওয়ার্কের জন্য সম্ভব হলে শিশুদের বসার উপযোগী কিছু ছোট ছোট চেয়ার ও টেবিল থাকতে পারে। এছাড়া শিশুদের উচ্চতার সাথে মিল রেখে একটি চকবোর্ড এবং শিশুদের কাজ, আঁকা ছবি এবং লেখা প্রদর্শনের জন্য ডিসপ্লে বোর্ড, শেলফ, তাক ও হ্যাঙ্গার রাখা যেতে পারে। শ্রেণিকক্ষের জন্য এ সকল স্থায়ী সম্পদ ছাড়াও কিছু নিয়মিত ব্যবহার্য জিনিসের (ষ্টেশনারি) প্রয়োজন পড়ে যা শিখন-শেখানো কার্যক্রমের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেমন, রঙিন কাগজ, চক, ডাস্টার, কাঁচি, আঠা, পোস্টার পেপার, বøু ট্যাক ইত্যাদি। এছাড়া বিভিন্ন শিখন-শেখানো সামগ্রি যেগুলো ব্যবহারের পর কিংবা নষ্ট হয়ে গেলে পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়ে সেগুলো নিয়মিত পরিবর্তনের ব্যবস্থা থাকা জরুরি।
প্রাক প্রাথমিক শ্রেণিতে শিখন শেখানো সামগ্রী ও উপকরণ
শিক্ষাক্রমের চাহিদা অনুযায়ী যে সমস্ত শিখন-শেখানো সামগ্রী ও উপকরণ শ্রেণি পর্যায়ে পৌঁছানো প্রয়োজন যথাসময়ে যথাযথভাবে তার সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি। শিক্ষাক্রমের সফল বাস্তবায়নের জন্য অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণপূর্বক এ সামগ্রী ও উপকরণসমূহ উন্নয়ন করা হয়েছে বিধায় এগুলোর যথাসময়ে সরবরাহ ও কার্যকর ব্যবহার বিঘিœত হলে কাক্সিক্ষত ফলাফল অর্জন সম্ভব নয়। এছাড়া শিখন-শেখানো কার্যক্রমের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন সময়ে যে ধরনের সামগ্রী/উপকরণ স্থানীয়ভাবে তৈরি, সংগ্রহ, ব্যবহার ও সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে শ্রেণি পর্যায়ে তাও নিশ্চিত করা জরুরি।
প্রাক প্রাথমিক শ্রেণির সময়
প্রতিদিন শ্রেণিকক্ষে শিখন-শেখানো সময় হবে আড়াই ঘণ্টা। সপ্তাহে ৬ কার্যদিবস ধরে সকল ধরনের সরকারি ছুটি, অনাকাক্সিক্ষত ছুটি, বিভিন্ন উৎসব এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে শ্রেণিকক্ষের জন্য বছরে মোট ১৮৫ কার্যদিবস ধরে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাক্রম বিন্যস্ত করা হয়েছে। সুতরাং শ্রেণির জন্য নির্ধারিত ১৮৫টি কার্যদিবসে প্রতিদিন আড়াই ঘন্টা করে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করলে এই শিক্ষাক্রমের সকল পরিকল্পিত কার্যক্রম যথাসময়ে সম্পন্ন করা যাবে।
প্রাক প্রাথমিক শ্রেণিতে পরিবারকে সম্পৃক্তকরণ
প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য অজর্নে শিক্ষাক্রম প্রণয়নের সময় নির্দিষ্ট শিখনফল অর্জনে শুধুমাত্র শ্রেণিকক্ষের শিখন-শেখানো কাজের উপরই শুধু নির্ভর করা হয়নি বরং বাড়ি বা পরিবারের সংগে নিবিড় যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে শিশুর বিকাশ ও শিখন ত্বরান্বিত করার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে শিক্ষাক্রমের কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে স্কুল পর্যায়ে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিবারকে সম্পৃক্ত করা জরুরি। যেহেতু বিকাশ ও শিখনের বেশকিছু ক্ষেত্রে পরিবারের উপর নির্ভরতা রয়েছে সেহেতু পরিবারকে যথাযথভাবে সম্পৃক্ত না করলে শিক্ষাক্রমের সফল বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা যাবে না।