প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সামষ্টিক মূল্যায়ন পদ্ধতি

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামষ্টিক মূল্যায়ন পদ্ধতি


জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষাক্রম ২০২১ অনুসারে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬০% সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে ২০২৩ সাল থেকে। তাই সকল শিক্ষক সহ শিক্ষার্থীদের এই বিষয়ে জানা জরুরী। নিচে সামষ্টিক মূল্যায়ন কাকে বলে, সামষ্টিক মূল্যায়নের সুবিধা ও সামষ্টিক মূল্যায়ন পদ্ধতি দেওয়া হলো।

সামষ্টিক মূল্যায়ন (Summative Assessment)

সামষ্টিক মূল্যায়ন নির্দিষ্ট সময় অন্তর অনুষ্ঠিত হয়। এটি শ্রেণিকক্ষে দৈনন্দিন শিখন-শেখানো কার্যক্রমের অংশ নয়। সাধারণত কোনো অধ্যায়ের শেষে বা সেমিস্টার বা প্রান্তিকের শেষে এ ধরনের মূল্যায়ন অনুষ্ঠিত হয়। এর অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থী কী শিখেছে (শিখনফল/বিষয়বস্তু) এবং কেমন শিখেছে (কতটা ভালো) তা জানা। 

জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১ অনুযায়ী প্রাথমিক স্তরের মূল্যায়ন পদ্ধতিকে নতুনভাবে সাজানো হয়েছে । পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন রূপরেখায় ১ম থেকে ৩য় শ্রেণির সকল বিষয়ে শিখন মূল্যায়নের জন্য শতভাগ বিদ্যালয় ও শ্রেণিকক্ষভিত্তিক মূল্যায়ন (School and Classroom Based Assessment) বা ধারাবাহিক মূল্যায়ন পদ্ধতি এবং ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণিতে শতকরা ৬০ ভাগ বা ধারাবাহিক মূল্যায়ন পদ্ধতি এবং শতকরা ৪০ ভাগ সামষ্টিক মূল্যায়ন ((Summative Assessment) পদ্ধতি প্রর্বতনের প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে যা ২০২৫- ২০২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে কার্যকর হবে।

প্রতি প্রান্তিক শেষে নির্ধারিত সময়ে সামষ্টিক মূল্যায়ন অনুষ্ঠিত হবে। ১ম/২য়/৩য় প্রান্তিকের শেষে নির্ধারিত অর্জন উপযোগী যোগ্যতার তথা শিখনফলের ভিত্তিতে ঐ প্রান্তিকের মধ্যে পঠিত সম্পূর্ণ বিষয়বস্তু সম্পর্কে শিক্ষার্থীর অর্জন উপযোগী যোগ্যতা বা শিখনফল অর্জন মূল্যায়ন করার প্রক্রিয়াই হলো সামষ্টিক মূল্যায়ন।

সামষ্টিক মূল্যায়ন কাঠামো

প্রাথমিক স্তরে সামষ্টিক মূল্যায়ন সুষ্ঠুরূপে বাস্তবায়নের জন্য একটি সামষ্টিক মূল্যায়ন কাঠামো তৈরি করা হবে যা পরিমার্জিত প্রাথমিক শিক্ষাক্রম ২০২১ এর ভিত্তিতে রচিত নতুন পাঠ্যপুস্তক ও শিক্ষক সহায়িকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।


সামষ্টিক মূল্যায়নে যা অন্তর্ভুক্ত হতে পারে -

  • আনুষ্ঠানিক পরীক্ষা, লিখিত প্রশ্নপত্র, মৌখিক ও পর্যবেক্ষণ চেকলিস্ট
  • এসাইনমেন্ট বা অর্পিত কর্ম সম্পাদন, ব্যবহারিক, হাতে-কলমে কাজ, প্রজেক্ট সম্পাদন ইত্যাদি।

সামষ্টিক মূল্যায়ন কখন কীভাবে সংঘটিত হবে?

  • সামষ্টিক মূল্যায়ন প্রত্যেক প্রান্তিক শেষে অনুষ্ঠিত হবে।
  • সামষ্টিক মূল্যায়ন আনুষ্ঠানিক পরীক্ষার মাধ্যমে এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত হবে।
  • এই মূল্যায়নে সব শিক্ষার্থীর জন্য একই টুলস ব্যবহার করা হবে।


প্রাথমিক স্তরে সামষ্টিক মূল্যায়ন কতবার সংঘটিত হবে?

প্রাথমিক স্তরে মোট তিনটি প্রান্তিক রয়েছে। প্রত্যেক প্রান্তিকের শেষে ৪র্থ থেকে ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিটি বিষয়ে ৪০% নম্বরের উপর সামষ্টিক মূল্যায়ন অনুষ্ঠিত হবে। সম্পূর্ণ শিক্ষাবর্ষে তিনটি প্রান্তিকে প্রতিটি বিষয়ে ৪০% নম্বরের উপর মোট ৩ বার সামষ্টিক মূল্যায়ন অনুষ্ঠিত হবে। প্রতি প্রান্তিকে সামষ্টিক মূল্যায়নের নম্বরের সাথে ধারাবাহিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বর যোগ করে ঐ প্রান্তিকে শিক্ষার্থীর মোট প্রাপ্ত নম্বর নির্ণয় করা হবে। ৩য় প্রান্তিক শেষে শিক্ষার্থীর পারদর্শিতা সম্পর্কে চূড়ান্ত শিখনচিত্র প্রদান করা হবে। প্রতি প্রান্তিক শেষে শিক্ষকগণ সামষ্টিক মূল্যায়নের ফলাফল ‘মূল্যায়ন ফলাফল সংরক্ষণ ছকে’ রেকর্ড করবেন।


রচনামূলক প্রশ্ন উত্তরের নম্বর প্রদানের নীতিমালা

রচনামূলক প্রশ্নের উত্তরে ন্যায়সঙ্গতভাবে নম্বর প্রদান (Fair marking) একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রাথমিক স্তরে রচনামূলক প্রশ্নের জন্য বিভিন্ন মানের নম্বর বরাদ্দ থাকবে। মূল্যায়নকারী শিক্ষকদের সুষমভাবে নম্বর বন্টনের জন্য উপযুক্ত মানদন্ড নির্ধারণ করা হবে অর্থাৎ নম্বর প্রদানের একটি নীতিমালা তৈরি করা হবে, যা সকল শিক্ষার্থীর উত্তর মূল্যায়নের সময় প্রয়োগ করবেন।

বিষয়ভেদে নম্বর প্রদানের Rubric বিভিন্ন হবে। যেমন, বাংলা বিষয়ের পঠন দক্ষতা মূল্যায়নের Rubric এবং লিখন দক্ষতা মূল্যায়নের জঁনৎরপ এক হবে না। আবার বিজ্ঞান বিষয়ের উত্তর মূল্যায়নের নীতিমালা সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের উত্তর মূল্যায়নের নীতিমালা এক হবে না। কাজেই, প্রাথমিক স্তরের শিক্ষকগণের জন্য বিভিন্ন বিষয়ের উত্তর মূল্যায়নের জন্য পৃথক নীতিমালা তৈরি ও অনুসরণ করা হবে। এই নির্দেশিকায় প্রতিটি বিষয়ের রচনামূলক প্রশ্নের উত্তরে নম্বর প্রদানের জন্য একটি করে নমুনা Sample Rubric প্রদান করা হবে। শিক্ষকগণ উক্ত নমুনা অনুসরণ করে সম্ভাব্য সব ধরনের রচনামূলক প্রশ্নের উত্তরে নম্বর প্রদান করবেন। এই বিষয়ে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষাক্রম ২০২১ এর আলোকে পাঠ্যপুস্তক রচনা শেষে সামষ্টিক মূল্যায়ন নির্দেশিকা তৈরি ও যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।

মূল্যায়নের ফলাফল সংরক্ষণ

মূল্যায়ন ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো শিক্ষার্থীর শিখন সম্পর্কিত তথ্য বা ফলাফল সংরক্ষণ করা। প্রাথমিক স্তরের ধারাবাহিক ও সামষ্টিক মূল্যায়নের ফলাফল সংরক্ষণের জন্য শিক্ষকগণ প্রতিটি বিষয়ের একটি করে ‘মূল্যায়ন ফলাফল সংরক্ষণ ছক’ ব্যবহার করবেন। প্রত্যেকটি মূল্যায়ন ফলাফল সংরক্ষণ ছকে ধারাবাহিক ও সামষ্টিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বর রেকর্ড করার ব্যবস্থা থাকবে।


প্রতি প্রান্তিকে ধারাবাহিক ও সামষ্টিক মূল্যায়নের ফলাফল রেকর্ড বা সংরক্ষণ করা

প্রতি প্রান্তিকের প্রতিমাসে কমপক্ষে একবার করে মোট তিনবার ধারাবাহিক মূল্যায়নের ফলাফল ‘মূল্যায়ন ফলাফলসংরক্ষণ ছকে’ রেকর্ড করতে হবে। তিনবারের প্রাপ্ত নম্বরের মোট ও গড় নম্বর নির্ণয় করে ফলাফল সংরক্ষণ ছকের নির্ধারিত স্থানে লিখতে হবে। প্রতি প্রান্তিকে সামষ্টিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বর মাত্র একবার নির্ধারিত স্থানে লিখতে হবে। প্রতি প্রান্তিকে সামষ্টিক মূল্যায়ন থেকে প্রাপ্ত নম্বরের সাথে ধারাবাহিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত গড় নম্বর যোগ করে প্রান্তিকের চূড়ান্ত নম্বর নির্ণয় করে ফলাফল সংরক্ষণ ছকের নির্ধারিত স্থানে লিখতে হবে।

বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল:

৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির চূড়ান্ত ফলাফলের ক্ষেত্রে প্রতি শ্রেণির তিনটি প্রান্তিকের ৪০% এবং ধারাবাহিক মূল্যায়নের ৬০% নম্বরের সমন্বয়ে চূড়ান্ত ফলাফল নির্ণয় করতে হবে। এই ফলাফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীরা পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীণ হবে। 


আরো পড়ুনঃ 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন