বিদ্যালয় পর্যায়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন নির্দেশিকা, ২০২৩

বিদ্যালয় পর্যায়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন নির্দেশিকা, ২০২৩


শিক্ষার মান উন্নয়নে একটি পরিকল্পিত পদ্ধতির প্রয়োজন রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার শিক্ষা খাতে একাধিক উন্নয়নমূলক প্রকল্প নিয়ে কাজ করে চলেছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রকাশিত হয়েছে ‘বিদ্যালয় পর্যায়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন নির্দেশিকা, ২০২৩’। এই নির্দেশিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান উন্নয়নে নতুন দিশা দেখাবে। এখানে আমরা এই নির্দেশিকার মূল দিকগুলো আলোচনা করব।


১. বিদ্যালয় পর্যায়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা বা স্লিপ (School Level Improvement Plan-SLIP ) :
বিদ্যালয় পর্যায়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা (School Level Improvement Plan) সংক্ষেপে স্লিপ (SLIP) নামে পরিচিত। স্লিপ বিদ্যালয়পর্যায়ে প্রণীত একটি উন্নয়ন-পরিকল্পনা। বিদ্যালয় পর্যায়ে গৃহীত এ পরিকল্পনায় স্থানীয় জনগণের শিক্ষা সম্পর্কিত আশা আকাঙ্খা ও প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটে। এটি প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নের প্রারম্ভিক দলিল হিসেবে বিবেচিত এবং বিদ্যালয় পর্যায়ে উন্নয়নের একটি অন্যতম হাতিয়ার। মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনার আওতায় বিদ্যালয়ের শিখন-শেখানো ও শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নের মাধ্যমে শিক্ষার সামগ্রিক মানোন্নয়নের জন্য তিন বছরের একটি আবর্তক পরিকল্পনা হিসেবে প্রণয়ন করতে হয়। উক্ত মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রতি অর্থবছরের একটি বার্ষিক কর্ম পরিকল্পনা বা Annual Operation Plan (AOP) প্রণয়ন করা হয়, যা স্লিপ দলিলের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে ।

২. স্লিপের লক্ষ্য:
স্লিপের লক্ষ্য হলো প্রাথমিক শিক্ষার ভিশন ও মিশনকে বিবেচনায় রেখে শিক্ষা সহায়ক পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার গুনগত মান নিশ্চিত করা।

৩. স্লিপের উদ্দেশ্য:
শিখন শেখানো কার্যাবলির জন্য পাঠ সংশ্লিষ্ট উপকরণ তৈরি, সংগ্রহ ও সংরক্ষণের পাশাপাশি বিদ্যালয় ভবনের অতীব অপরিহার্য সংস্কার ও অতীব অপরিহার্য সরঞ্জাম সংগ্রহ করা, যাতে শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ অক্ষুন্ন থাকে। এতদ্ব্যতীত দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে দ্রুততার সাথে বিদ্যালয়কে পাঠ উপযোগী করে তোলা স্লিপের অন্যতম উদ্দেশ্য। স্লিপ বা বিদ্যালয়ভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নরূপ:


স্লিপের মূখ্য উদ্দেশ্য:
  • শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ অক্ষুন্ন রাখা তথা মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা
  • বিদ্যালয় গমনোপযোগী সকল শিশুর ভর্তি নিশ্চিত করা, ঝরে পড়া রোধ ও পুনরাবৃত্তি রোধ করা, প্রাথমিক শিক্ষাচক্র সমাপ্তির হার বৃদ্ধি করা;
  • একীভূত, বৈষম্যহীন ও সমতাভিত্তিক প্রাথমিক শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তোলা;
  • শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনস্ক করে গড়ে তোলা;
  • শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং স্থানীয় জনগণকে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত করা;
  • সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে জরুরি কার্যক্রম অক্ষুন্ন রাখা নিশ্চিত করা।

৪. বিদ্যালয়ের অংশীজন (স্টেকহোল্ডার):

  • প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষকবৃন্দ, ছাত্রছাত্রী, এসএমসি, পিটিএ, অভিভাবকবৃন্দ, প্রাক্তন শিক্ষার্থী, বিদ্যালয় এলাকার জনসাধারণ বা বিদ্যালয় কমিউনিটি, বিদ্যালয়ের শুভানুধ্যায়ী, বিদ্যালয় এলাকার কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ, প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারি, জনপ্রতিনিধি, সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি।
৫. স্লিপ প্রণয়ন দল:

  • স্লিপ প্রণয়ন দল গঠনের জন্য কার্যকর এসএমসি এবং পিটিএ থাকতে হবে। অনুমোদিত দল না থাকলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের অনুমোদনক্রমে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করতে হবে;
  • স্লিপ প্রণয়নের জন্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি স্লিপ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন দল গঠন করতে হবে;
  • স্লিপ প্রণয়ন দল গঠনে উদ্যোগী, কর্মক্ষম, বিদ্যোৎসাহী এবং যোগ্য ব্যক্তিকে নির্বাচন করতে হবে; স্লিপ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে নিম্নরূপভাবে বিদ্যালয়ভিত্তিক কমিটি প্রয়োজনবোধে প্রতিবছর গঠন করতে হবে:
স্লিপ প্রণয়ন দল



৬. স্লিপ প্রণয়ন দলের কার্যপরিধি:
  • বিদ্যালয়ের প্রকৃত পরিস্থিতি বিশ্লেষণ, সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও সমস্যা সমাধানের জন্য আশু কার্যক্রম নির্ধারণ; বিদ্যালয়কে কাঙ্খিতমানে উন্নীতকরণের নিমিত্ত চাহিদা নিরূপণ;
  • প্রকৃত চাহিদার বিপরীতে ব্যয় নিরূপণ ও অর্থের উৎস ও সম্ভাব্য পরিমাণ নির্ধারণ;
  • স্লিপ প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্তকরণ এবং বিদ্যালয়ের সঙ্গে এলাকাবাসীর নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন,
  • বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কার্যক্রমে স্থানীয় হিতৈষী জনগণ এবং প্রতিষ্ঠানকে অনুদান প্রদানে উৎসাহ প্রদান;
  • খসড়া বিদ্যালয় উন্নয়ন পরিকল্পনা (স্লিপ) প্রণয়ন;
  • প্রণীত স্লিপ এসএমসির সভায় প্রাথমিকভাবে অনুমোদনের জন্য দাখিল
  • সময়ভিত্তিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বাৎসরিক কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়ন।
৭. স্লিপ প্রণয়ন দলের আনুষঙ্গিক ব্যয় নির্বাহঃ
  • স্লিপ প্রণয়ন দলের কার্যসম্পাদনের জন্য স্লিপ তহবিল হতে প্রতিবছর সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকা ব্যয় করা যাবে;
  • এ অর্থ স্লিপ প্রণয়নকালে বিদ্যালয়ের স্টেকহোল্ডারগণের সঙ্গে মতবিনিময় সভা, এসএমসি, পিটিএ, সোসাল অডিট কমিটির সদস্যদের দায়-দায়িত্ব অবহিত করার জন্য এবং স্লিপ প্রণয়ন দলের কার্য সম্পাদনের জন্য ব্যয় করা যাবে;
  • বিদ্যালয়ের বার্ষিক কর্মপরিকল্পনায় তা উল্লেখ করতে হবে।
৮. স্লিপ প্রণয়ন প্রক্রিয়া:
সময়ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনাসহ বছরভিত্তিক পরিকল্পনা তৈরী করতে হবে এবং ০৩ (তিন) বছর মেয়াদী বাস্তবায়নযোগ্য শিপ পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।

৮.১ পরিকল্পনা প্রণয়ন
পরিশিষ্ট -১ এর ছক ব্যবহার করে নির্ধারিত চাহিদার আলোকে নিম্নোক্তভাবে স্বল্প মেয়াদী ও মধ্য-মেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে:
  • চাহিদা ও অগ্রাধিকারের আলোকে কার্যক্রম গ্রহণ;
  • গৃহীত কার্যক্রমের পরিমাণ বা সংখ্যা নির্ধারণ;
  • কার্যক্রমের একক ব্যয়ের আলোকে মোট ব্যয় নির্ধারণ;
  • কোন কার্যক্রমের একক ব্যয় নির্ধারণ করা না গেলে থোক ব্যয় উল্লেখ করা;
  • পাঠভিত্তিক উপকরণ তৈরি, সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও ব্যবহারের জন্য শ্রেণি ও বিষয়ভিত্তিক শিক্ষককে দায়িত্ব প্রদান;
  • কাব-স্কাউটস্ এর অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ তৈরী/সরবরাহের ক্ষেত্রে কাব লিডার/কাব শিক্ষকগণকে সম্পৃক্ত করা।

৮.২ স্লিপ অনুমোদন:
  • এসএমসির সভায় প্রাথমিকভাবে অনুমোদিত স্লিপের দুটি কপি প্রধান শিক্ষক কর্তৃক সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসারের নিকট প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অনলাইনে প্রেরণ করতে হবে;
  • সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার পরিকল্পনাটি পর্যালোচনা করে ০৩ (তিন) কর্মদিবসের মধ্যে “স্লিপ গাইডলাইন অনুসারে প্রণীত হয়েছে' মর্মে প্রত্যয়নসহ সুপারিশ সহকারে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অনলাইনে উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসারের নিকট অনুমোদনের জন্য দাখিল করবেন;
  • সংশ্লিষ্ট সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসারগণের সহায়তায় স্লিপ উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার কর্তৃক পর্যালোচনাপূর্বক প্রধান শিক্ষকের সাথে আলোচনা করত: সংশোধন করতে হবে কিংবা ০৭ (সাত) কর্মদিবসের মধ্যে অনুমোদন প্রদান করতে হবে;
  • অনুমোদিত স্লিপের এক কপি সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ে বাস্তবায়নের জন্য প্রেরণ করতে হবে এবং উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিস, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস, বিভাগীয় উপপরিচালক ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য প্রেরণ ও সংরক্ষণ করতে হবে। 'অনলাইন ওয়েববেজড প্ল্যানিং এন্ড মনিটরিং' পদ্ধতি চালু হলে উপরে বর্ণিত তথ্য সংক্রান্ত কার্যক্রম অনলাইনে সম্পন্ন করতে হবে;
  • অন্যান্য সরকারি দপ্তর বা সংস্থার অনুদান গ্রহণ করা হলে তাও স্লিপ ফান্ডে জমা প্রদান করতে হবে;
  • অন্যান্য সরকারি দপ্তর বা সংস্থার বা বেসরকারি অনুদান গ্রহণ করা হলে তা অন্তর্ভুক্ত করে স্লিপ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
এছাড়াও বিদ্যালয় পর্যায়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন নির্দেশিকা, ২০২৩ এ যে বিষয়গুলো করেছে তা নিম্নে সংক্ষেপে দেওয়া হলো। বিস্তারিত পড়তে পিডিএফ ডাউনলোড করে পড়ুন।

৯. বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা প্রনয়ন ও বাস্তবায়ন
১০. সামাজিক নিরীক্ষা কমিটি গঠন
১১. বিদ্যালয় পর্যায়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন-কার্যক্রম পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন
১২. স্লিপ কার্যক্রমের সময়সূচি
১৩. স্লিপ অনুদান এবং এর বার্ষিক ব্যবস্থাপনা
১৪. স্থানীয় পর্যায়ের অনুদান
১৫. বিদ্যালয়ে জনসম্পৃক্ততা ও জনমালিকানাবোধ সৃষ্টিকরণ
১৬. স্লিপ কার্যক্রম সংক্রান্ত প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্ব
১৮. প্রযোজ্যতা

বিদ্যালয় পর্যায়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন নির্দেশিকার ছকসমূহ


এছাড়া উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন নির্দেশিকায় যে ছকগুলো সংযুক্ত করা হয়েছে সেগুলো নিচে দেওয়া হলো।

পরিশিষ্ট-১: বিদ্যালয় উন্নয়ন পরিকল্পনা ছক (মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনা)
পরিশিষ্ট-২: স্লিপ বাস্তবায়নের জন্য বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা ছক
পরিশিষ্ট-৩: স্লিপ বাস্তবায়নের জন্য তহবিল সংগ্রহের রশিদ
পরিশিষ্ট-৪: বিদ্যালয়ের স্লিপ কার্যক্রমের বাস্তবায়ন অগ্রগতির প্রতিবেদন
পরিশিষ্ট-৫: সামাজিক নিরীক্ষা কমিটির নিরীক্ষা ও মূল্যায়ন ছক
পরিশিষ্ট-৬: অংশীজনের (স্টেকহোল্ডার গণের ) সঙ্গে মতবিনিময় সভার কার্যবিবরণী

বিদ্যালয় পর্যায়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন নির্দেশিকা, ২০২৩ পিডিএফ ডাউনলোড


বিদ্যালয় পর্যায়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন নির্দেশিকা, ২০২৩ pdf download করতে নিচের ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করুন।




আরো পড়ুন:

FAQ:
বিদ্যালয় পর্যায়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন নির্দেশিকা, ২০২৩ নিয়ে যদি কোনো প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে দয়া করে কমেন্ট করুন।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন